ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দশ বছরে দাদেলধুরার অর্ধেক বন উজাড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
দশ বছরে দাদেলধুরার অর্ধেক বন উজাড় মহাভারত বনের অনেক অংশেই গাছ কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: নেপালের দাদেলধুরা জেলায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর ভূমি জুড়ে রয়েছে বিশাল বনাঞ্চল। এক দশক আগে এ এলাকায় ঘন জঙ্গল থাকলেও আজ মানুষের থাবায় এর প্রায় অর্ধেকটাই শূন্য।

নেপালের সংবাদমাধ্যম জানায়, দাদেলধুরার বনাঞ্চল দু’ভাগে বিভক্ত। জেলার ৭৫ ভাগ জুড়ে মধ্য পাহাড়ি এলাকার মহাভারত বন ও দক্ষিণাঞ্চলে চারে বন।

মাস দুয়েক আগে দেশটির স্থায়ী উন্নয়ন গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এ বনাঞ্চলের প্রায় ৩৫ ভাগ ইতোমধ্যে উজাড় হয়ে গেছে।

পশ্চিম নেপালের ভিমদত্ত মহাসড়ক দিয়ে মহাভারত বনের প্রবেশপথ ধরে এগোলে দেখা যায়, এর বিশাল এলাকায় গাছের কোনও চিহ্নও নেই। এ পথেই জনবসতিগুলো ধীরে ধীরে বনকে গ্রাস করে ফেলছে।  

সরকারি তথ্যমতে, দাদেলধুরা থেকে প্রতিবছর অন্তত দুই লাখ ঘনফুট কাঠ রফতানি হলেও পাচারের কোনও প্রমাণ নেই। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ এলাকায় কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে।  

ইতোমধ্যে চারে বনের ৪০ ভাগ এলাকায় গড়ে উঠেছে জনবসতি। বিভিন্ন এনজিওর তথ্যমতে, এখানকার বাসিন্দারা মূলত নিকটবর্তী তারাই অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন। এখানকার প্রায় ৫০ হেক্টর বনভূমি অবৈধদের দখলে চলে গেছে।

এছাড়া, অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের জন্যেও বনাঞ্চল ছোট হয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দাদেলধুরার স্থানীয় বাসিন্দা ও কমিউনিটি ফরেস্ট কনজিউমার ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিল্লি রাজ যোশী বলেন, প্রতিটি আঞ্চলিক ইউনিট প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে। এতে বন উজাড়ের হার আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। পরিবেশ রক্ষার কোনও ব্যবস্থা না রেখেই এ উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

যদিও বন উজাড়ের বিষয়টিকে বড় কোনও সমস্যা বলে মনে করছে না কর্তৃপক্ষ।
জেলা সহকারী বন কর্মকর্তা প্রকাশ যোশী বলেন, গাছ কাটার কারণে বন ছোট হচ্ছে, এটা ঠিক না। পুরনো গাছ কেটে ফেলায় বনে নতুন গাছ জন্মানোর সুযোগ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষ ও গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই বনাঞ্চলের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে। তারা ওই এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করার কোনও বিকল্প নেই।

বনের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট না করলে এটিকে মাত্র পাঁচ বছরেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে বলেও মনে করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।

এদিকে, নেপালের বন ধ্বংসের পেছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবকেই দায়ী করেছেন স্থায়ী উন্নয়ন গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান টেক রাজ পান্ডেয়া।

বন রক্ষার উদ্দেশ্যে ২০১৯-২০ সালকে ‘বৃক্ষরোপণ বছর’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। সাম্প্রতিক হিসাব মতে, বন রক্ষা কার্যক্রমে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন রুপি ব্যয় করছে নেপাল।  

তবে, বন রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সব উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও সমাজকর্মীরা।

মহাভারত সংরক্ষণ অভিযানের সমন্বয়ক জয়রাজ পানেরু বলেন, বন রক্ষার পরিকল্পনাগুলো শুধু কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ না থাকলেই হয়। এ বিষয়ে এযাবৎ নেওয়া কোনও পদক্ষেপই কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।