ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আমাজনের দাবানল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে আসন্ন জি-সেভেন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এ টুইটে ম্যাক্রোঁ বলেন, আমাদের ঘর পুড়ছে। এ গ্রহের ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করা আমাজন বনে আগুন লেগেছে। এটা আন্তর্জাতিক সঙ্কট। জি-সেভেনের সদস্যরা আসুন, দু’দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রথমে আলোচনা করি।
আমাজনের আগুন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক টুইটে তিনি বলেন, আমাজন বনের অগ্নিকাণ্ডে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জলবায়ু সঙ্কটের মধ্যেই অন্যতম প্রধান অক্সিজেনের উৎস ও জীববৈচিত্র্যের আরও ক্ষতি আমরা পোষাতে পারবো না। আমাজনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
দোষ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের?
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেইর বোলসোনারো দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমাজন বন উজাড় কয়েকগুণ বেড়েছে বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইএনপিই) জানিয়েছে, এবছর ব্রাজিলে আগুন লাগার ঘটনা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। গত বছর এ সময়ে আগুন লেগেছিল ৪০ হাজারবারের মতো। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজারেরও বেশি, যার অর্ধেকই ঘটেছে আমাজন অঞ্চলে। স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবিতেও ধরা পড়েছে বনের বিশাল অংশ উধাও হওয়ার চিত্র।
গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমাজনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনুসন্ধানের মাধ্যমে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জেইর বোলসোনারো। তার অনুপ্রেরণাতেই পশুপালক, কৃষক, কাঠুরেরা গণহারে বনে আগুন লাগিয়েছে বলে দাবি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।
তবে, শুরু থেকেই এ অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। এমনকি, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগও পছন্দ নয় তার।
আমাজন ইস্যু নিয়ে জি-সেভেন সম্মেলনে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। ম্যাক্রোঁ নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ তার। পাশাপাশি, ব্রাজিল যে সম্মেলনে নেই, সেখানে আমাজন ইস্যু নিয়ে আলোচনা তাদের উপনিবেশবাদী মানসিকতার পরিচয় বলেও মন্তব্য করেছেন বোলসোনারো।
এর আগে, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জানান, অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিশোধ নিতে ও তার সরকারকে বিপাকে ফেলতে পরিবেশবাদী এনজিওগুলোই আমাজনে লাগাতে পারে। তবে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আরেক মন্তব্যে এ দাবানলের সঙ্গে স্থানীয় কৃষকরাও জড়িত থাকতে পারে বলে জানান জেইর বোলসোনারো।
তাছাড়া, সপ্তাহখানেক আগেই আমাজন ইস্যুতে বাকবিতণ্ডার জেরে আইএনপিইর পরিচালককে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট। এবারের জুন মাসে গত বছরের চেয়ে ৮৮ শতাংশ বেশি বন উজাড় হয়েছে- স্যাটেলাইটের এ তথ্যের পক্ষে কথা বলেছিলেন আইএনপিই পরিচালক। সেসময়ও এ তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট।
কী বলছেন বোলসোনারো?
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাজন ইউরোপের চেয়েও বড়। এত বড় এলাকায় আগুনের সঙ্গে কীভাবে লড়বেন? এর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত উপকরণ নেই।
কী অবস্থা আমাজনের?
বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন তৈরি করে আমাজন। এ কারণে, এটিকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলা হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড জানিয়েছে, আমাজন যদি এভাবে জ্বলতেই থাকে, তাহলে একসময় সেটি উল্টো কার্বন নিঃসরণ শুরু করতে পারে।
শুধু কার্বন গ্রহণই নয়, প্রায় ৩০ লাখ উদ্ভিদ ও প্রাণী, ১০ লাখ আদিবাসীর আবাস এ বনাঞ্চলে। দ্রুত এ আগুন নেভানো না গেলে গোটা বিশ্বের পরিবেশেই এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
আগুন লাগার কারণ কী?
শুষ্ক আবহাওয়া, প্রবল বাতাস ও গরমের কারণে আমাজনে আগুন লেগেছে বলে দাবি করেছেন ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী রিকার্ডো সালেস। কিন্তু, সিএনএনের আবহাওয়াবিদ হেইলি ব্রিঙ্ক বলেন, এটি অবশ্যই মনুষ্য-সৃষ্ট। একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলার সুযোগ নেই। এবারের আগুনের ঘটনাও প্রচলিত কৃষিভিত্তিক কারণের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গাছপালা সব শুকনো, আগুন লাগানোর এটাই সেরা সময়। কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে আর আগুন লাগিয়ে জমি পরিষ্কার শুরু করে, যেন তাদের পশুগুলো চরানো যায়। আমাদের ধারণা, আমাজনে সেটাই চলছে।
অলাভজনক সংগঠন অ্যামাজন ওয়াচের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ক্রিশ্চিয়ান পয়ারিয়ার জানান, ক্যালিফোর্নিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলের মতো গরমের মৌসুমেও আমাজনে এত সহজে আগুন ছড়ায় না। কৃষক ও পশুপালকরা দীর্ঘদিন থেকে ভূমি পরিষ্কার করতে আগুন দেওয়ার পদ্ধতি ব্যবহার করছে। আজ এভাবে আমাজন জ্বলার কারণও তারাই।
আরও পড়ুন> ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ জ্বলছে মানুষের কারণে!
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
একে