বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়েছে। এতে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের নির্যাতন বন্ধ ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
রাখাইন, কাচিন ও শান প্রদেশে যৌন নির্যাতনের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী শত শত মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি এ প্রতিবেদনটি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তোলা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অসংখ্য যৌন ও লিঙ্গ-সম্পর্কিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও মিয়ানমার সরকার এসব প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু হলে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের তদন্তকারী দল বলেছিল, মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধের কারণে তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচার হওয়া উচিত।
নতুন প্রতিবেদনে জাতিসংঘ মিশন জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা নিয়ম করে কিশোরী, তরুণী, শিশু, যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও তৃতীয়লিঙ্গের মানুষদের ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। এটি স্পষ্টই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মারাত্মক শারীরিক নির্যাতন, যা প্রকাশ্যেই চলতো… অপমানের স্বাধীনতার বিস্তৃত সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা বা কষ্টের সুপরিকল্পিত প্রয়োগ।
ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান বলেন, দেশের সব লিঙ্গের মানুষদের ভয়াবহ নির্যাতনের দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৈফিয়ত চাইতে হবে।
মিশন এক্সপার্ট রাধিকা কুমারাস্বামী বলেন, এ বিষয়ে অবশ্যই নীরবতা ভাঙতে হবে।
জাতিসংঘ মিশন জানায়, যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো ছিল সাধারণ নাগরিকদের ভয় দেখানো, আতঙ্কিত করা বা শাস্তি দিতে সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকৃত ও সুপরিকল্পিত কৌশল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা জাতীয় কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া বেশিরভাগ ভুক্তভোগীকেই পেটানো, সিগারেট দিয়ে পোড়ানো, ছুরি দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত, ধর্ষণ অথবা সেনাঘাটিতে যৌনদাসী হিসেবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তরুণ-কিশোরদেরও ধর্ষণ, জোরপূর্বক নগ্নতা বা যৌন নির্যাতনের কথাও জানানো হয় এ প্রতিবেদনে।
মিশন এক্সপার্ট ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, আমরা তৃতীয়লিঙ্গের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে দু’বার। কারণ তারা রোহিঙ্গা আর তৃতীয়লিঙ্গ।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ হয়েছে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও রাখাইনে স্বাধীনভাবে চলাফেরায় এখনো শঙ্কা রয়েছে তাদের।
ভুক্তভোগীদের অধিকার নিশ্চিত ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
একে