বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতাদের সঙ্গে লড়াই চলছে গ্রেটা থানবার্গ নামে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর। এক শিশুর কাছে হেরে যাবেন, এই ভয়েই হয়তো একের পর এক কথার তীর ছুড়ছেন বিশ্ব মোড়লরা।
কিন্তু, গ্রেটা থানবার্গ যেন অন্য ধাতুতে তৈরি! বড় বড় নেতারা পাত্তা দিক-না দিক, নিজের লড়াই থেকে কিছুতেই পিছু হটতে রাজি নন। যত সমালোচনাই আসুক, ঠাণ্ডা মাথায় আগুন চোখে বলতে পারেন, আপনাদের কত্ত বড় সাহস!
সম্প্রতি জলবায়ু আন্দোলন নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছেন এ সুইডিশ কিশোরী। গত মাসে তার ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন দেড়শরও বেশি দেশের প্রায় অর্ধ-কোটি মানুষ। এসময় নিউইয়র্কের মাটিতে দাঁড়িয়ে গ্রেটা দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিশ্বনেতারা আমাদের কথা শুনতে পান না। কিন্তু, আমি তাদের আমার কথা শুনিয়েই ছাড়বো।
আরও পড়ুন> জলবায়ু আন্দোলনে গ্রেটার পাশে গোটা বিশ্ব
কথা রেখেছেন তিনি। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বসে বিশ্বনেতাদের মুখের ওপর বলেছেন, আপনারা বলছেন তরুণদের কাছে আশার খোঁজে এসেছেন। এ কথা বলার সাহস পান কোত্থেকে? আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন আপনারা। আমরা আপনাদের বেইমানি বুঝে ফেলেছি। এখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখ আপনাদের ওপর। আপনারা যদি আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন, আমরা আপনাদের কোনোদিন ক্ষমা করবো না।
ছোট্ট মুখে বড় বড় কথা শুনে সেদিন হেসেছিলেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের নেতারা। তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা থামেনি বাইরেও। সাধারণ মানুষের চোখে নায়ক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চোখে তিনি নিতান্তই এক শিশু, যার চঞ্চলতা দেখতে ভালোই লাগে।
জাতিসংঘে গ্রেটার বক্তব্য টুইটারে শেয়ার করে ক্যাপশনে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, তাকে দেখে মনে হচ্ছে, খুব খুশি ছোট্ট একটা মেয়ে যে উজ্জ্বল ও চমৎকার ভবিষ্যতের খোঁজে রয়েছে। দেখতে ভালোই লাগছে!
সমালোচনা করতে ছাড়েননি বিশ্বের আরেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ভ্লাদিমির পুতিনও। দু’দিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমি গ্রেটা থানবার্গের ধারণার সঙ্গে একমত নই। কেউ তাকে বোঝায়নি যে, আধুনিক বিশ্ব জটিল ও অন্যরকম… যাও, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বোঝাও, তারা কেন দরিদ্র অবস্থায় থাকছে, কেন সুইডেনের মতো নয়।
গ্রেটার আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পুতিন। তার মতে, গ্রেটা হচ্ছে খুবই অল্প জানা এক কিশোরী, যাকে প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন> ‘স্বল্পজ্ঞানী’ গ্রেটাকে ব্যবহার করছে অন্যরা: পুতিন
বিশ্বনেতাদের একের পর এক আক্রমণে অবশ্য মোটেও ভীত নন গ্রেটা। কথায় কথা বাড়ে, তর্কে বহুদূর- এটাই হয়তো তার নীতি। এ কারণে জবাবের মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন টুইটারকে। সরাসরি কোনো মন্তব্য নয়, বদলেছেন নিজের পরিচিতিটুকুই (বায়ো)।
ট্রাম্পকে জবাব দিতে তার কথাটুকুই তুলে দিয়েছিলেন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের বায়োতে। এতে লেখা ছিল, উজ্জ্বল ও চমৎকার ভবিষ্যতের খোঁজে খুব খুশি ছোট্ট একটা মেয়ে।
পরে, রুশ প্রেসিডেন্টকে জবাব দিতেও একই পথ অনুসরণ করেছেন তিনি। এবার বায়োতে লিখেছেন, উদার কিন্তু স্বল্পজ্ঞানী এক মেয়ে।
গ্রেটার এমন নীরব জবাবও সাড়া ফেলেছে নেটিজেনদের মধ্যে। তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তায় প্রশংসার ফুলঝুরি ছুটছে চারদিকে। সঙ্গে চাপও বাড়ছে বিশ্বনেতাদের ওপর। শুধু মুখের বুলি নয়, শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের চিন্তা নয়, মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল পৃথিবীকে বাঁচাতে সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৯
একে