বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়।
খবরে বলা হয়, পম্পেও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হামলার বিষয়ে তুরস্ককে সবুজ সংকেত দেয়নি।
এর আগে বুধবার (৯ অক্টোবর) তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান এক টুইটার বার্তায় কুর্দিদের ওপর হামলার ঘোষণা দেন। সীমান্তে কুর্দিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা ও কামানের গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হলে, হাজার হাজার বেসামরিক অধিবাসী সীমান্তবর্তী জায়গা ছেড়ে চলেন যেতে বাধ্য হন।
ব্রিটিশ ভিত্তিক সিরিয়ান মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা (এসওএইচআর) জানায়, তুরস্কের অভিযানে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) ১৬ সদস্য নিহত হয়েছে।
এসওএইচআর ও এসডিএফ উভয়ের পক্ষ থেকে তীব্র সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। তিনি এক টুইটার বার্তায় দাবি করেন, কুর্দিশ ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ ১৮১টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।
তুরস্ক পক্ষের সিরিয়ান যোদ্ধাদলের মুখপাত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, তেল আবাদ থেকে এ হামলা শুরু হয়। বিশেষ সেনাবাহিনী ও সামরিক গাড়িবহর সীমান্তের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে।
রোববার (৬ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সোমবার (৭ অক্টোবর) সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন না দিলেও কোনো বাধা দেবে না বলে জানানো হয়েছিল।
তবে সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় তুরস্কের হামলার পর সুর পাল্টে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামলায় সায় নেই জানিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
পম্পেও বলেন, ‘তুরস্ককে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক হামলার অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ’
তবে সে অঞ্চল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় সম্মতি দিয়েছে বলে মিথ্যে দাবি করছে তুরস্ক। ’
তুরস্কের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি আলোচনা সভা ডাকা হয়েছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, আমাদের লক্ষ্য সিরিয়ার সীমান্তে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি প্রতিরোধ করা। ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, কুর্দি মিলিশিয়ামুক্ত করে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলকে ‘নিরাপদ ভূমি’ ঘোষণা করা হবে। এ অঞ্চলটিতে তুরস্কে অবস্থানরত ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীদের জন্য বাসযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনা তুর্কি সেনাবাহিনীর।
এদিকে এ হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে কুর্দিরা।
কুর্দিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, আমরা তুরস্কের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করতে যাচ্ছি। মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ও তুরস্কের আকস্মিক হামলায় ‘মানবাধিকারের যে বিপর্যয় ঘটবে’ এর দায় বিশ্ববাসীকে নিতে হবে।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রবাহিনী কুর্দি মিলিশিয়ারা। সেখানে কারাগার ও বন্দী শিবিরে থাকা কয়েক হাজার আইএস জঙ্গি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব কুর্দিদের। অঞ্চলটি এক প্রকার তাদের দখলে। সেখানে তুরস্কের এ অভিযান আইএস জঙ্গিদের বন্দি অবস্থার নিশ্চয়তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, তুরস্কের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়বে যদি তারা সীমা অতিক্রম করে। যুক্তরাষ্ট্র এ হামলা সমর্থন করে না। এটা একটা ‘বাজে সিদ্ধান্ত’ ছিল।
তুর্কি ও কুর্দিরা কয়েক শতক ধরে যুদ্ধে লিপ্ত।
এদিকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটস দু’দলই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।
সিনেটর লীন্ডসে গ্রাহাম বলেন, এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র লজ্জাজনকভাবে নিজেদের মিত্র বাহিনীকে ত্যাগ করেছে। ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলান অনুমোদনের বিরুদ্ধে চুক্তি প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন। যদিও প্রশাসন তুরস্কের বিরোধিতা করতে চাইছে না, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এফএম/এইচএডি