বুধবার (১৬ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ট্রাম্প এ কথা বলেন। তুরস্কের অভিযান ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বাপর পদক্ষেপ ঘিরে নানা মুখরোচক আলোচনার মধ্যে প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্য আরও রহস্য তৈরি করেছে বিশ্লেষক মহলে।
কুর্দি বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগঠন পিকেকে-কে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ও সংগঠন। তুরস্ক মনে করে, পিকেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের সিরিয়া সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় তুরস্কের অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা (বিচ্ছিন্নতাবাদ কায়েম) চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে সীমান্তের ওপাশের সিরিয়ান কুর্দিদের সশস্ত্র সংগঠন ওয়াইপিজিকেও পিকেকে’র অংশ মনে করে তুরস্ক। আবার ওয়াইপিজিকে তুরস্কের মতো করে দেখে না যুক্তরাষ্ট্র। বরং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাঁধার পর আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসা যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় যে এসডিএফ জোটের সহায়তা পেয়েছে, সেই জোটের অংশ এই ওয়াইপিজি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়ই ওয়াইপিজিসহ এসডিএফ জোট আইএসকে সিরিয়ার ওই অঞ্চল থেকে হটিয়েছে।
ওয়াইপিজির মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ওই অঞ্চল থেকে নিজেদের সৈন্যদের সরিয়ে নিলে তাদের শক্ত অবস্থান ভেঙে দিতে গত ৯ অক্টোবর ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ শুরু করে তুরস্ক। কুর্দি যোদ্ধাদের এভাবে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের হুট করে চলে যাওয়ার বিষয়ে সমালোচনা শুরু হয় ঘরে-বাইরে সবখানে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এ সংক্রান্ত নিন্দা প্রস্তাবে খোদ ট্রাম্পের দলীয় অনেকেও ভোট দেন।
এতে খানিকটা বিরক্তি ঝেড়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনো পুলিশিং এজেন্ট নয় (যে কাউকে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা দিয়ে আসবে)। এখন আমাদের ঘরে ফিরতে হবে। ’
তিনি তুরস্কের অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, ‘সীমান্তে তাদের সমস্যা রয়েছে। এটা আমাদের সীমান্ত নয়। তাই সেখানে আমাদের প্রাণ হারাতে থাকা উচিত হবে না। আমাদের সৈন্যরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারা এখন নিরাপদ। তারা সেখানকার পরিস্থিতি সমাধান করে চলেছে, সম্ভবত লড়াই ছাড়াই তারা তা করতে পারবে। ’
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘কৌশলগতভাবে দুর্দান্ত’ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখছি, সমঝোতা করছি এবং তুরস্ক যেন ঠিকঠাক কাজটা করে সে চেষ্টা চালাচ্ছি। কারণ আমরা নিঃস্বার্থভাবে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ করতে চাই। ’
সিরিয়ার ময়দানে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন আইএসের হয়ে লড়াইয়ের কথা বলে এলেও তাদের তৎপরতা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী বলে মনে করা হচ্ছিল। ট্রাম্প তার সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ায় সেই আসাদের সরকারের সঙ্গেই চুক্তি করে তার বাহিনীকে সীমান্তে ডেকেছে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসা কুর্দি যোদ্ধারা।
এতে অসন্তোষ ঢেকে না রেখে ট্রাম্প বলে ফেলেন, ‘কুর্দিরা ফেরেশতা নয়। তারা আমাদের সঙ্গে মিলে লড়াই করেছিল। সেজন্য আমরা বহু অর্থ খরচাও করেছি, সেটা ঠিক আছে। তারা যখন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, তখন ভালো করেছিল। যখন তারা আমাদের সঙ্গে আসেনি, তখন খুব ভালো করেনি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এইচএ/
** সিরিয়ায় অভিযান ‘সীমিত’ করতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান রাশিয়ার