বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দেশটির সিনালোয়া অঙ্গরাজ্যে ‘এল চ্যাপো’ নামে কুখ্যাত হোয়াকিন গুজমানের ছেলে অভিদিয়ো লোপেজকে (২৮) আটক করার পর তাকে ছাড়াতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দিনভর গুলিবিনিময় করে মাদকচক্রের সন্ত্রাসীরা। বেকায়দায় পড়ে শেষতক পিছু হটতে বাধ্য হয় সরকারি বাহিনী।
৬২ বছর বয়সী গুজমান মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে ‘সিনালোয়া’ মাদকচক্রটির গুরু। এই চক্রটি যুক্তরাষ্ট্রে মাদকপাচারের ক্ষেত্রে প্রধান অভিযুক্ত। গুজমানকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হলেও সবশেষ ২০১৫ সালে তিনি কারাগারে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেরিয়ে যান। পরে তাকে গ্রেফতার করে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে মাদকপাচার-অর্থপাচারসহ ১০টি অভিযোগ প্রমাণ হয় এবং এ বছরের শুরুতে তার কারাদণ্ড হয়। তিনি বন্দি থাকলেও মাদকচক্রটি সামলাচ্ছিলেন তার ছেলে অভিদিয়োসহ পরিবারের সদস্যরা। মেক্সিকোর নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী আলফনসো দুরাজো সংবাদমাধ্যমকে জানান, আদালতের পরোয়ানা থাকায় মেক্সিকো সিটি থেকে ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সুলিয়াসান শহরের একটি বাড়িতে অভিদিয়োকে ধরতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। সেখানে অভিদিয়োর সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। তাদের ধরার পরই হঠাৎ মাদকচক্রের ভারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। এদের উদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনীর বহর আসতে থাকলে রাস্তায় রাস্তায় বাধা দেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। তারা নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকে। অগ্নিসংযোগ করতে থাকে সামরিক-বেসামরিক গাড়িতে। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকলে সরকার অভিদিয়োকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সংবাদমাধ্যম জানায়, অভিদিয়োকে ধরার পর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সহিংসতায় গোটা শহরে গৃহযুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিবিনিময়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এলাকা। এতে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়। বন্ধ হয়ে যায় দোকান-পাট, অফিস-আদালত। সরকারের পক্ষ থেকেও জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে এবং স্কুল-কলেজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়। এদিকে মাদক সম্রাটের ছেলে এবং শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীকে ধরেও ছেড়ে দেওয়ার কারণে তুমুল সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওবরাদোর বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী গুজমানের ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে ‘সঠিক’ করেছে। জনগণের প্রাণরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মেক্সিকোতে অসংখ্য ড্রাগ কার্টেল (মাদকচক্র) রয়েছে। এসব চক্রের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতা যেমন হয়, তেমনি তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও সংঘাতে জড়ায়। এই চক্রগুলোর কোনো নেতাকে ধরা হলে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েই সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালায়।
২০০৬ সালে মেক্সিকোয় মাদক চক্রগুলোর বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনী অভিযান শুরুর পর মাদকসংশ্লিষ্ট সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধানতম ঘোষণা ছিল, মাদকচক্র নির্মূল করা।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
এইচএ/