শনিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় এ রায় ঘোষণা করা হবে। রায় ঘিরে উত্তরপ্রদেশসহ বেশ কিছু রাজ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
আদালতের রায়ে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন। রায় ঘিরে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় হাজার হাজার পুলিশ ও আধাসামরিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রায় ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় ৫শ’রও বেশি মানুষকে আটক করা হয়।
খবরে বলা হয়, ১৬ শতকে অযোধ্যায় নির্মিত বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে বিতর্কে দশকের পর দশক ধরে হিন্দু ও মুসলিমরা বিভক্ত হয়ে আছে। ওই জায়গার প্রকৃত মালিক কারা বছরের পর বছর ধরে এ সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে।
হিন্দুদের বিশ্বাস, যে জায়গাটিতে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল, সেটি মূলত তাদের দেবতা প্রভু রামের জন্মস্থান। ফলে তারা সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করতে চায়। অন্যদিকে মুসলিমদের দাবি ১৬ শতকে নির্মিত এ মসজিদে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রার্থনা করে আসছিল।
বিবিসি জানায়, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার সবগুলো সড়ক।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান ওম প্রকাশ সিং জানান, রায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের ব্যাপারে বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো হিন্দু বা মুসলিমের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বরদাস্ত করা হবে না। ’
সরকার জানিয়েছে যে কোনো ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য ছোটখাটো বা বড় যে কোনো ধরনের দাঙ্গা ঠেকাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রয়োজনে প্রাদেশিক সরকার একাধিক স্কুলকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ব্যবহার করবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রায় ঘিরে জনগণকে শান্ত ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘মামলার রায় যাই হোক, তাতে কেউই বিজয়ী বা পরাজিত হবে না। ইন্ডিয়ার জনগণের কাছে আমার আবেদন এই যে, মামলার রায়ে যেন শান্তির মূল্যবোধ শক্তিশালী হয়, সাম্য ও দেশের মঙ্গল হয়, প্রাধান্যের সঙ্গে সেটিই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
যা নিয়ে মূল বিতর্ক
বিবাদের মূলে আছে ১৬ শতকের বাবরি মসজিদ, যা ১৯৯২ সালে এক দাঙ্গায় ভেঙে ফেলে বেশ কিছু হিন্দু চরমপন্থি। ওই দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।
অনেক হিন্দুর বিশ্বাস, একটি হিন্দু মন্দির গুড়িয়ে তার জায়গায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করে আক্রমণকারী মুসলিমরা।
মুসলিমদের বক্তব্য, ১৬ শতক থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তারা ওই মসজিদে প্রার্থনা করে আসছিল। ১৯৪৯ সালে কিছু চরমপন্থি হিন্দু মসজিদটিতে একটি রাম মূর্তি প্রতিষ্ঠা ক’রে পূজা শুরু করে।
সেই থেকে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ই জায়গাটির মূল মালিকানা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে চলেছে। হিন্দুরা মসজিদের জায়গায় একটি রাম মন্দির নির্মাণ করতে চায়।
কারা এ মামলা লড়ছে?
এ বিশেষ মামলাটি লড়ছে ৩টি পক্ষ। এর মধ্যে দুটি হিন্দু ও একটি মুসলিম পক্ষ। মুসলিম পক্ষে লড়ছে ‘মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড’। ভারতে ইসলামিক সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এ বোর্ডের।
অন্যদিকে হিন্দু পক্ষরা হলো- ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ‘হিন্দু মহাসভা’ ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের সংস্থা ‘নির্মোহী আখড়া’।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ১০ বছর ২০০২ সালে এলাহাবাদের উচ্চ আদালতে অযোধ্যার ওই জায়গাটি নিয়ে মামলা করে এ তিন পক্ষ।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে ওই মামলার রায় দেওয়া হয়। রায়ে বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর জায়গা তিন পক্ষের মধ্যে সমান তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।
আদালত জানান, ওই জায়গাটি তিন ভাগে বিভক্ত করা উচিত। মুসলিম সম্প্রদায় এর তৃতীয় অংশটি পাবে। বাকি দুই অংশের মধ্যে মূল যে অংশে বাবরি মসজিদ ছিল, সেটি পাবে ‘হিন্দু মহাসভা’।
সে সময় আদালত এ সংক্রান্ত ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণও দেন। আদালত বলেন, ওই জায়গাটি রামের জন্মস্থান। সেখানে একটি হিন্দু মন্দির গুড়িয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এবং প্রকৃত ইসলামি অনুশাসন মেনে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে হিন্দু-মুসলিম সব পক্ষই ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতের সর্ব্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। আজ সেই মামলারই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এইচজে