ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কা নির্বাচন: মুসলিম ভোটারবাহী গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
শ্রীলঙ্কা নির্বাচন: মুসলিম ভোটারবাহী গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ  ভোট দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কাবাসী। ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। কিন্তু এরই মাঝে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তন্ত্রীমালে অঞ্চলে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটারবাহী একটি গাড়িবহরে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরের ওই এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। ভোটারবাহী গাড়িবহরটিতে শতাধিক যানবাহন ছিল।

এর মধ্যে অন্তত দুটি বাসে গুলি লাগে। এতে এখন পর্যন্ত কারো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।  

খবরে বলা হয়, উপকূলীয় পুত্তালাম শহর থেকে ওই গাড়িবহরে করে ভোটাররা পার্শ্ববর্তী জেলা মান্নারের ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছিল। পথে তন্ত্রীমালেতে বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এসময় তারা টায়ার পুড়িয়ে ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ওৎ পেতে থেকে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই দুর্বৃত্তরা এ পরিকল্পনা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরে খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুতে যায়। এসময় পুলিশের ধাওয়ায় হামলাকারীরা পিছু হটে। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন।

কে বা কারা এ হামলা চালিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে, নির্বাচনে অন্যতম প্রধান ফলনির্ধারক সংখ্যালঘু মুসলিমদের আতঙ্কিত ও ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করতেই এ হামলা চালানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

সংখ্যালঘু ভোটারদের ওপর হামলার এ ঘটনাকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা হিসেবে অভিহিত করেছে পুলিশ।  

এ ব্যাপারে অন্যতম নির্বাচন কমিশনার রত্নজীবন হোলি বলেন, কর্তৃপক্ষ উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।  

‘মুসলিমরা ভোট দিতে দূরে কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে নিজেদের এলাকাতেই ভোটকেন্দ্র চেয়েছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। এরকম হামলা বা বিপত্তির ব্যাপারে তাদের আশঙ্কা ছিল। তাদের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন মনোযোগ দেয়নি। ’ 

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারণে দেশটির সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

এবারের নির্বাচনে ৩৫টি দল অংশ নিয়েছে। জনজরিপ যাচাই-বাছাই করে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এতো সব প্রার্থীর মধ্যে মূলত তুমুল লড়াই হবে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই গোটাবায়ে রাজাপাকসে ও ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) উপ-দলনেতা ও মন্ত্রী সাজিথ প্রেমাদাসার মধ্যে। গোটাবায়ে রাজাপাকসে লড়ছেন সিংহলিজ বুদ্ধিস্ট ন্যাশনাল পার্টির (এসএলপিপি) পক্ষ নিয়ে।

গোটাবায়ে রাজাপাকসের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আঁতাতের খবর এরই মধ্যে মুসলিম জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে। নৃশংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে গোটাবায়ের বিরুদ্ধে।  

এতো কিছুর পরও কট্টর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় গোটাবায়ে। তার নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে সহিংসতামুক্ত নিরাপদ পরিবেশ তৈরি ও সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান।  

চলতি বছরের ইস্টার সানডেতে দেশটির গির্জায় বোমা হামলার ঘটনায় ২৬৯ জনের প্রাণহানির পর থেকে দেশটিতে মুসলিমরা নানা বঞ্চনার শিকার। ফলে তারা গোটাবায়ের চেয়ে প্রেমাদাসাকে বেশি নিরাপদ মনে করে।  

গত ১৫ বছর ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দাপট দেখিয়ে চলেছে রাজাপাকসে পরিবার। স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংখ্যালঘু ও নিম্নবর্ণ থেকে নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী রানাসিংহ প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ প্রেমাদাসার জনপ্রিয়তা বেশি। কিন্তু কট্টর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে ততটা সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারেননি তিনি। শ্রীলঙ্কার মন্থর অর্থনীতিকে গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালায় তার দল।  

সব মিলিয়ে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কার ভাগ্য ফিরবে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে ২২টি জেলায় ভোট দিচ্ছেন অন্তত ১ কোটি ৫৯ লাখ ভোটার।  

আগামী সোমবার (১৮ নভেম্বর) নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর জানা যাবে অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাকে পেতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
কেএসডি/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।