সম্প্রতি নায়েল বারগৌথির স্ত্রী ইমান নাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদুলু এজেন্সি। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকার থেকেই জানা যায় বারগৌথির জন্য পরিবারের অপেক্ষার কথা।
পরিবারের আশা, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের জেলে আটকে থাকা বারগৌথিকে একদিন তারা মুক্ত হিসেবে দেখতে পাবেন। যদিও কারাভোগের ৪০ বছর ইতোমধ্যে পার হয়ে যাচ্ছে।
কথা বলার সময় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল ইমান নাফির। নাফি বলেন, তিনি (নায়েল বারগৌথি) আবারও মুক্ত জীবন যাপন করতে পারবেন। আমি তার জন্য এখানেই অপেক্ষা করে থাকবো।
১৯৭৮ সালে গ্রেফতার হওয়া নায়েল ২০১১ সালে ৩৪ বছর কারাভোগের পর একবার মুক্তি পেয়েছিলেন। সেবার মুক্তি মিলেছিল হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া একটি বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায়। কিন্তু ২০১৪ সালে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া অন্য অনেকের সঙ্গে আবারও তাকে গ্রেফতার করা হয়। এবার তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
২০১১ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েলের জেলে তার সঙ্গে ১০ বছর বন্দি থাকা ইমানকে বিয়ে করেন নায়েল। তারা মাত্র ৩১ মাস একসঙ্গে থাকতে পেরেছিলেন। এখন ইমানই একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি যে শুধুমাত্র ইসরায়েলে নায়েলকে দেখতে যেতে পারেন।
ফের গ্রেফতারের রাতের কথা স্মরণ করে ইমান নাফি বলেন, সেই রাতটা আমার জন্য ছিল অত্যন্ত জঘন্য এবং ভৌতিক। নিজেকে বজ্রাহত মনে হচ্ছিল তখন।
‘মুক্তির পর দেখেছি তিনি সবসময়ই বাচ্চাদের ভালোবাসতেন। তাকে আমি বলতে শুনেছি, ফিলিস্তিনের বাচ্চারা আমারই বাচ্চা। আমার আশা একদিন আমাদেরও একটি সন্তান থাকবে ঘরে। তার নাম রাখবো নূর (আলো)’, যোগ করেন নাফি।
নাফি জানান, ২০১১ সালে মুক্তির পর ইতিহাস বিষয়ে ফিলিস্তিনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরু করেছিল নায়েল। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে বঞ্চিত করা হয়েছে শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকেও।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার সোসাইটির তথ্যমতে, নায়েল বারগৌথিকে ইসরায়েলের এশেল প্রিজনের একটি নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে নায়েল তার পিতা-মাতা এবং পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছেন। ২০১৮ সালে সালেহ বারগৌথি নামের তার এক ভাইপোকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। আর ওমর নামের অপর এক ভাইপোকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নায়েলের বোন হানান বারগৌথি বলেন, কারাগারে চল্লিশটি বছর পার হতে যাচ্ছে তার। এটা দীর্ঘ সময়। একইসঙ্গে এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। চিন্তা করে দেখেন তো, এসময়ের মধ্যে তার পরিবারে কতজন জন্ম নিল আর কতজনের হলো মৃত্যু। এতকিছুর পরও তিনি কারাগারেই রয়ে গেলেন। আমার এবং পরিবারের পক্ষে বিষয়টি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের কিন্তু মানতে হচ্ছে।
হানান জানান, ২০১১ সালে নায়েল মুক্তি পাওয়ার আগেই তাদের বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে মায়ের শেষ ইচ্ছের কথা স্মরণ করে হানান বলেন, ‘আমার বাবা ২০০৪ সালে এবং মা মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালে। মা মৃত্যুর আগে বলেছেন, তিনি নায়েলের অভাব অনুভব করছেন অত্যধিক মাত্রায় এবং শেষবারের মতো তাকে চুমু খেতে চান। কিন্তু মায়ের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ’
এসব কথা বলছেন আর কান্না করছিলেন হানান। তিনি বলেন, ভাইকে দেখতে যেতে পারি না। কেননা, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আমার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আমি জানি বাবা-মায়ের মৃত্যু নায়েলকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। সে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথমেই দেখতে গেছে বাবা-মায়ের কবর। আমি জানি, সে কী পরিমাণে তাদের অভাব অনুভব করছিল; আমি উপলব্ধি করতে পারি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড নায়েল বারগৌথি ভেঙে দিয়েছেন ২০০৯ সালেই।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৭শ’র বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এর অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
এইচএডি/