শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ডিক্যাপ্রিওর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বলসোনারো বলেন, ‘এই লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও খুব ভালো মানুষ, তাই না? আমাজনে আগুন লাগানোর জন্য যে টাকা দেয়। ’
এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) এক অনলাইন লাইভে ডিক্যাপ্রিও ও আমাজন অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’ (ডব্লিউডব্লিউএফ) বেসরকারি দমকল সংস্থাগুলোকে টাকা দেয়, যাতে তারা অগ্নিকাণ্ডের ছবি তোলে।
‘এদিকে ছবির জন্য এনজিওগুলো করলো কী? সবচেয়ে সহজ পন্থা কী? নিজেরাই বনে আগুন লাগাও, ছবি তোলো, ভিডিও বানাও। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাও। সেই ছবি দেখিয়ে ডব্লিউডব্লিউএফ লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে, সে ৫ লাখ ডলার অনুদান দেয়। সেই টাকার একটা অংশ যায়, তাদের কাছে যারা বনে আগুন লাগায়। লিওনার্দো আপনি আমাজনে অগ্নিকাণ্ডে অনুদান দিচ্ছেন। এটা হতে পারে না। ’
এরও আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে বলসোনারো মন্তব্য করেন, আমাজনে অগ্নিকাণ্ডকালে স্বেচ্ছাসেবী দমকলকর্মীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে অগ্নিকাণ্ডের ছবি হাতিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’ (ডব্লিউডব্লিউএফ)। পরবর্তীতে তারা ওইসব ছবি টোপ হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনুদানের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ডিক্যাপ্রিও তাদের প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা (৫ লাখ মার্কিন ডলার) অনুদান দেন।
ডব্লিউডব্লিউএফ দমকলকর্মীদের থেকে আমাজন অগ্নিকাণ্ডের ছবি সংগ্রহ বা ডিক্যাপ্রিওর কাছ থেকে আর্থিক অনুদান নেওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে ডিক্যাপ্রিওর দিক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে অনুদানের উদ্দেশ্যে আমাজনে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগে গত মঙ্গলবার বেসরকারি দমকল সংস্থা ‘অল্টার দো শ্যো ফায়ার ব্রিগেড’র চার সদস্যকে গ্রেফতার করে ব্রাজিল পুলিশ। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার বিচারকের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোকে হেনস্থা করার লক্ষ্যে ওই দমকল কর্মীদের আটক করা হয় বলে বলসোনারোর তীব্র সমালোচনা করে বিভিন্ন রাজনীতিক ও এনজিও সংস্থা।
ডিক্যাপ্রিও একজন সর্বজনবিদিত পরিবেশবাদী। আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকালে তিনি নানাভাবে সক্রিয় ছিলেন। তার ‘লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ফাউন্ডেশন’ বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে।
আমাজনে আগুন লাগানো নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পক্ষকে দায়ী করেন বলসোনারো। তার এসব মন্তব্য ঘিরে একের পর এক বিতর্ক তৈরি হয়েই চলেছে। অগ্নিকাণ্ডকালে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগকে ‘বাড়াবড়ি’ মন্তব্য করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ অনেকের বিরুদ্ধেই আপত্তিকর মন্তব্য ও কটাক্ষ করেন ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট।
২১ আগস্ট ফেসবুকে এক লাইভ পোস্টে তিনি বলেন, সবকিছু এই নির্দেশ করছে যে, বিভিন্ন এনজিও আমাজনে গিয়ে আগুন লাগাচ্ছে। পরে এসব ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ চাইলে তিনি জানান, তার কাছে এমন লিখিত কিছু নেই।
এর একদিন পরই ২২ আগস্ট বলসোনারো বলেন, হতে পারে কৃষকরা অবৈধভাবে আমাজনে আগুন লাগাচ্ছে। পরবর্তীতে এর কিছুদিন পরই অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করায় তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে মিথ্যাবাদী বলে গালমন্দ করেন।
ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার আটটি দেশব্যাপী বিস্তৃত আমাজন। তবে এর বৃহৎ অংশই ব্রাজিলের মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
এইচজে