কিন্তু একটি ব্যাপারে অনেকেরই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় এতো দেশ থাকতে গাম্বিয়াই কেন মামলা করতে গেলো? রোহিঙ্গা সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বাংলাদেশও তো এমন একটি মামলার কথা ভাবেনি। বর্তমান দুনিয়ায় দেশগুলো যেখানে পরস্পরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যতিব্যস্ত, সে সময়ে গাম্বিয়া কেন এমন অবস্থান নিলো?
এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
গাম্বিয়ার পক্ষে গণহত্যার এ মামলাটি করেছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবু বকর এম তাম্বাদু। তিনি বেশ কয়েক বছর জাতিসংঘের গণহত্যা বিষয়ক একটি ট্রাইবুনালে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। ওই ট্রাইবুনালে ১৯৯৪ সালে মধ্য আফ্রিকার আরেক দেশ রুয়ান্ডায় সংঘটিত গণহত্যার বিচার চলছিল। ফলে গণহত্যার স্বরূপ ও ভয়াবহতা সম্পর্কে খুব ভালো করেই অবহিত ছিলেন তিনি।
সেই তাম্বাদুই রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠিত ওইআইসির তদন্ত কমিটির জেরে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন। সে সময় সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুঃসহ স্মৃতি তাকে রুয়ান্ডার রক্তাক্ত গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গোত্রীয় সহিংসতায় প্রায় ৮ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো হত্যা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে রুয়ান্ডার ইতিহাসের সাদৃশ্য তাড়া করে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রীকে। রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রসঙ্গে জাতিসংঘ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পড়েও তাদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন তিনি। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার পেছনে গাম্বিয়ার এই মানবিক তাড়নাও অন্যতম প্রভাবক।
এসবের বাইরে গাম্বিয়ার নিজেরও রয়েছে রক্তাক্ত এক অতীত। ২০১৭ সালে একনায়ক ইয়াহিয়া জাম্মের ২২ বছরের শাসন থেকে মুক্ত হয় এ দেশ। ইয়াহিয়ার শাসনামলে একের পর এক নৃশংসতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এ দেশকে। ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার বেশ কিছু মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
সার্বিক প্রেক্ষাপটেই রাখাইনের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠে গাম্বিয়া। শেষমেশ চলতি বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে মানবিকতার বিরল নজির স্থাপন করে দেশটি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে নিপীড়িত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়।
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল গাম্বিয়াকে এ মামলা চালিয়ে যেতে ওআইসিসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সহায়তা করছে। কূটনৈতিকভাবে তাদের পাশে আছে বাংলাদেশও।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এইচজে