ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ইরানের স্থাপনায় হামলা করলে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হবেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২০
ইরানের স্থাপনায় হামলা করলে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হবেন ট্রাম্প

ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ইরানের ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন তা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেক মার্কিন রাজনীতিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম ইরানে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন গত শনিবার (৪ জানুয়ারি)। তিনি বলেছিলেন, ‘সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা সম্পদের ওপর হামলা হলে ইরানের সংস্কৃতির জন্য গুরুত্ব বহন করে এমন জায়গাতে ‘খুব দ্রুত ও বিধ্বংসী’ হামলা চালানো হবে।

’ 

পরদিন রোববার ওই হুমকির পুনরাবৃত্তি করে ট্রাম্প টুইট বার্তায় বলেন, ‘যদি ওরা মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করে, নির্যাতন করে, রাস্তার ধারে বোমা মেরে মার্কিনীদের উড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কেন ওদের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারবো না?’

ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে তেহরানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ৫২ জন কূটনীতিক ও মার্কিন নাগরিককে জিম্মি করার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেই সুনির্দিষ্টভাবে ৫২টি স্থাপনায় হামলার হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।  

আরও পড়ুন...সোলেমানির জানাজায় রেকর্ডভাঙা মানুষের ঢল

তবে ট্রাম্পের এই হুমকির সমালোচনা শুধু আন্তর্জাতিকভাবেই নয় হচ্ছে স্বদেশেও। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে জানায়, যুদ্ধ সম্পর্কিত জেনেভা কনভেনশন, তার ৫৩ ধারার বলা হয়েছে- ‘কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা একেবারেই নিষিদ্ধ। ’ এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি এই কাজ করেন, সেটা হবে যুদ্ধাপরাধের সামিল।

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলে যুদ্ধাপরাধ করার হুমকি দিচ্ছেন। ’

ট্রাম্পের হুমকির কঠোর জবাব দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ। তিনি বলেন, ‘হাজার বছর ধরে বর্বররা এসে ইরানের নগরীগুলো ধ্বংস করেছে, সভ্যতা ধ্বংস করেছে, পাঠাগার পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা এখন কোথায়? ইরানিরা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আরও শক্তিশালী হয়ে। ’

আরও পড়ুন...বাবার মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায়নি, ট্রাম্পকে সোলেমানির মেয়ে

এদিকে, ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প যেসব রণহুংকার দিচ্ছেন তা তিনি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারেন, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ডেমোক্রেটদের মধ্যে।

সিনেটর জো বাইডেন বলেন, জেনারেল সোলেইমানি যতো খারাপ লোকই হোক, মনে রাখতে হবে তিনি ইরান সরকারের একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, তাকে হত্যার ফলে ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দিচ্ছে।

ডেমোক্রেটদের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত করতে তিনি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রস্তাব আনবেন। এর লক্ষ্য হবে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক ব্যবস্থা যেন ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ না হয়।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন জেনারেল সোলেমানি, ইরাকের হাশদ আশ-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিসসহ মোট ১০ জন। তাদের মরদেহ শনিবার ইরাকের কাজেমাইন, বাগদাদ, কারবালা ও নাজাফ শহরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে আলাদা আলাদা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন লাখ লাখ ইরাকি। পরে রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে তেহরান পৌঁছায় সোলেমানিসহ নিহত ইরানিদের মরদেহ।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।