ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়া মার্কিন সেনা। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুংকারের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইকে’র এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই গত বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ২৯টির বেশি দেশে ৯৩টি ভিন্ন ভিন্ন সামরিক মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।  

এতে দাবি করা হয়, স্থলযুদ্ধ থেকে সাইবার যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন সামরিক কৌশলের এ অনুশীলনের লক্ষ্য ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশ নয়।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে এ মহড়ার অনুশীলন করা হয়েছে।

২০১৪ সালের মার্চে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক নেই।

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশই তাদের সামরিক তৎপরতা বিপুল পরিমাণে বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।  

গত বছরের অক্টোবরে ন্যাটোর পার্লামেন্টারি কমিটির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, ইউরোপীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে তাদের সামরিক তৎপরতা। এর প্রতিক্রিয়ায় থেমে নেই রাশিয়াও।

সামরিক মহড়ায় মার্কিন ট্যাংক।  ছবি: সংগৃহীতরুশ হুমকি মোকাবেলায় পূর্ব ইউরোপে যথেষ্ট পরিমাণে ন্যাটোর স্থলসেনা না থাকায় প্রতিবেদনে কমিটি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। তবে সামরিক দক্ষতা ও সরঞ্জামের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়াকে অতিক্রম করেছে বলে প্রকাশ করা হয়।

এদিকে অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানায়, ২০২০ সালে ইউরোপে ন্যাটোর পরিচালনায় এক সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হবে।

ইউএস ইউরোপিয়ান কমান্ড (ইউরোকম) জানায়, ৩৭ হাজার সেনার অংশগ্রহণে ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।

ইউরোকম জানায়, ‘শীতল যুদ্ধে’র সময়ে ন্যাটোর ‘রিটার্ন অব ফোর্সেস টু জার্মানি’ (রিফোরজার) সামরিক মহড়ার আদলেই এ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।  

১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পূর্ব ইউরোপে অনুষ্ঠিত বিশেষ মহড়া রিফোরজার হিসেবে পরিচিত।

১৯৮৮ সালে বিশেষ এ মহড়ায় সর্বোচ্চ এক লাখ ২৫ হাজার সেনা অংশ নেয়।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর এ ধরনের মহড়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে শেষবারের মতো রিফোরজার মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

‘রিফোরজার’ মহড়ার আদলে এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘দ্যা ডিফেন্ডার ইউরোপ-২০’ নামের এ মহড়াটি গত ২৫ বছরে মার্কিন বাহিনীর বৃহত্তম সামরিক মহড়া বলে জানানো হয়।

ইউরোকম তাদের বিবৃতিতে জানায়, জার্মানি ও পোল্যান্ডসহ মোট ১০টি ইউরোপীয় দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মহড়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক ডিভিশন পদাথিক সেনা, তিন ব্রিগেড ট্যাংক ও অন্য বাহিনীর সেনারা অংশ নেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও পূর্ব ইউরোপে তাদের সামরিক উপস্থিতি ও তৎপরতা বাড়িয়েছে।  

রুশ বার্তা সংস্থা তাস’এ প্রকাশিত গতবছরের জুনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত তিন বছরে রাশিয়া তাদের সামরিক সামর্থ্য দশ গুণ বাড়িয়েছে।

সমুদ্রে সামরিক মহড়া।  ছবি: সংগৃহীতযুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এমন উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন মার্কিন বুদ্ধিজীবীরা।

মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো যুদ্ধ হলেই তা পরমাণু যুদ্ধে রূপ নেবে। এর মাধ্যমে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২০
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।