ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

করোনায় লাখো মৃত্যুর দেশের ছুটির দিন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
করোনায় লাখো মৃত্যুর দেশের ছুটির দিন!

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ নিয়ে যখন বিভিন্ন দেশ তটস্থ ঠিক এমনই সময়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ মৃত্যু যে দেশটিতে হয়েছে সে যুক্তরাষ্ট্র মেতেছিল মেমোরিয়াল ডে’র ছুটি উদযাপনে। সৈকতে বা লেক সবখানেই ছিল মার্কিন নাগরিকদের সরব উপস্থিতি। মাস্ক পরা তো দূরের কথা মানতে দেখা যায়নি ন্যূনতম শারীরিক দূরত্বও। পরিস্থিতি দেখলে মনে হবে না কোনো দুর্যোগ পার করছে বিশ্ব।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর মে মাসের শেষ সোমবার পালিত হয় মেমোরিয়াল ডে। দেশটিতে কর্মরত অবস্থায় মৃত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণ করা হয় দিনটিতে।

১৯৭১ সালে কংগ্রেস মেমোরিয়াল ডে’তে জাতীয় সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও দিনটি উদযাপনে কোনো ঘাটতি রাখতে দেখা যায়নি মার্কিন নাগরিকদের। খবর বিবিসির।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৯৯ হাজার মানুষের। রোগটি ছোঁয়াছে হওয়ার কারণে বলা হচ্ছিল, মানুষ যতটা পারে যেন ঘর থেকে বের না হয়, হলেও যেন মেনে চলে শারীরিক দূরত্ব। কিন্তু কার কথা কে শোনে! যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতের অবস্থা দেখলে মনেই হবে না কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র চিন্তিত!

প্রায় ডজনখানেক বোট নিয়ে মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন প্যারেডে অংশ নিয়েছে মানুষ।

বিবিসির খবরে বলা হয়, শনিবার (২৩ মে) ফ্লোরিডার রাজ্য পুলিশ অনুমতি ছাড়া জমায়েত হওয়ার কারণে ডায়টোনা বিচ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দেয়।

ছুটি উদযাপনে মিসৌরির বার এবং ওজার্কসের লেকেও লেগেছিল মানুষের ভিড়। যারা কোনোভাবেই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভাইরাস টাস্কফোর্স চিফ ড. দেবরাহ বার্কস বলছেন, এমন দৃশ্য দেখার পর বিষয়টি নিয়ে তিনি ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’।

তিনি বলেন, বাড়ির বাইরে বের হওয়ার পর আপনি যদি নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে না পারেন তবে অন্তত মাস্ক পরিধান করুন।

সমুদ্র সৈকতে ভিড়।

মিসৌরির সেন্ট লুইসের মেয়র লাইডা ক্রিসন নাগরিকদের এমন আচরণকে বিপদজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটি উদযাপনের এমন চিত্র সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বিপদজনক। উদযাপন শেষে তারা বাড়ি ফিরবেন। পরে বাড়বে আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা।

বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ হিসেবেই দেখছেন লাইডা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র সৈকতেও দেখা গেছে ভিড়। তবে সেখানে অধিকাংশ মানুষকে দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মুখ ঢেকে রাখতে দেখা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং শারীরিক দূরত্ব বজার রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন নাগরিকদের।

খুব দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির আশা করে মাইক পেন্স বলেছেন, মার্কিন নাগরিকরা নিরাপদ এবং দায়িত্বশীল উপায়ে পুনরায় দেশকে কাজে ফিরিয়ে আনবে।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার পর ভাবা হচ্ছিল, চীন প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগী। দেশটিতে যখন এ ভাইরাসে দাপট দেখাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার তার দেশের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে রেখেছেন। কিন্তু যখনই চীন ছাড়িয়ে ইউরোপের পাশাপাশি এ ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে দাপট দেখাতে শুরু করলো তখনই বালির বাঁধের মতো মিলিয়ে গেলো ট্রাম্পের আশ্বাস। প্রস্তুতির কথা জানানোটা যে ছিল ফাঁকা বুলি তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে। কোভিড-১৯ রোগের ছোবলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন গড়তে শুরু করলো মৃত্যুর নতুন নতুন মাইলফলক। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৯৯ হাজার ৮০৫ জনের। এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে দেশটির ১৭ লাখ ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।