সোমবার (১ জুন) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানায়।
রোববার (৩১ মে) নিউইয়র্ক, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, লস এঞ্জেলেসসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং দোকানে লুটের ঘটনা ঘটে।
রোববার জরুরি অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ১৫টি অঙ্গরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিনও ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। এসময় তারা আগুন জ্বালান এবং দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন।
ওয়াশিংটনের পুলিশ হোয়াইট হাউসের কাছে আগুন জ্বালানো বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এমনকি হোয়াইট হাউসের কাছে প্রেসিডেন্টদের চার্চ হিসেবে পরিচিত সেইন্ট জন্স এপিসকোপাল চার্চেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার (৩০ মে) রাতে সহিংস বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে ১৯৬৮ সালে মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের গুপ্তহত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এ ধরনের গণবিক্ষোভ দেখা যায়।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫টিরও বেশি শহরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুদিন আগেও যেসব সড়ক একেবারে ফাঁকা ছিল, সেগুলোতে বিক্ষোভকারীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে।
ফিলাডেলফিয়ার স্থানীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করতে ও অন্তত একটি দোকান লুট হতে দেখা যায়।
এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ফিলাডেলফিয়াতে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনো, এখনই! তারা দোকানপাট লুট করছে। আমাদের মহান ন্যাশনাল গার্ডদের ডাকো। ’
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মোনিকাতেও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে অন্তত ৪ হাজার ৪শ’ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লুট, কারফিউ ভঙ্গসহ বেশ কয়েকটি অপরাধে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মিনিয়াপোলিসে গুরুত্বপূর্ণ এক মহাসড়কে বসানো একটি ব্যারিকেড ভেঙে দ্রুতগামী একটি লরি একদল বিক্ষোভকারীকে লক্ষ্য করে চালিয়ে যাওয়ায় এর চালককে গ্রেফতার করা হয়।
তবে ডেনভারে হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা হাত পিঠমোড়া করে রেখে উপুড় হয়ে স্লোগান দেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। ’
এছাড়া, আটলান্টা, বোস্টন, মায়ামি এবং ওকলাহোমায়ও বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছেন বলেও জানা গেছে।
আটলান্টায় তরুণ দু’জন কলেজছাত্রের ওপর ট্যাজার ব্যবহার করাসহ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করায় পুলিশের দু’জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত সোমবার (২৫ মে) মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিনিয়াপোলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। এসময় ফ্লয়েড বলেছেন, ‘প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, ‘আমাকে মারবেন না। ’
ফ্লয়েডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০ ডলারের একটি জালনোট ব্যবহার করেছিলেন। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার আগে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, হাতকড়া পরাতে বাধা দিচ্ছিলেন তিনি।
তবে পুলিশের সঙ্গে ফ্লয়েড কীভাবে সংঘর্ষে জড়ালেন তা ভিডিওতে দেখা যায়নি।
এ ঘটনায় নিরস্ত্র ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু রাখা ৪৪ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনসহ চারজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে ডেরেক শভিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস বিক্ষোভ, ২ ডজন শহরে কারফিউ জারি
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২০
এফএম