নিষেধাজ্ঞায় পড়া চারজন হলেন, জিনজিয়াংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য চেন কোয়াঙ্গু, জিনজিয়াংয়ের রাজনৈতিক ও আইনি কমিটির (এক্সপিএলসি) সেক্রেটারি ঝু হাইলুন, জিনজিয়াং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর (এক্সপিএসবি) বর্তমান পার্টির সেক্রেটারি ওয়াং মিংশান এবং সাবেক পার্টি সেক্রেটারি হুয়ো লিউজুন।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) তাদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেন, যেভাবে চীন উইগুরে মুসলিম, সংখ্যালঘু কাজাখ এবং শিনজিয়াংয়ের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জোরপূর্বক কাজ করানো থেকে শুরু করে ইচ্ছামতো আটক করা, জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা এবং তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস মুছে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা দেখে যুক্তরাষ্ট্র তো অলসভাবে বসে থাকতে পারে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রোজারি বিভাগ থেকেও দেওয়া হয়েছে একই ধরনের বিবৃতি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো রকম আর্থিক লেনদেন অপরাধ বলে চিহ্নিত হবে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে, তা আপাতত ফ্রিজ থাকবে। এছাড়া এই চারজনের বাইরেও শিনজিয়াংয়ের বেশ কিছু কমিউনিস্ট নেতাকে ভিসা দেওয়া হবে না বলে মার্কিন সূত্র জানাচ্ছে।
শিনজিয়াং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো (এক্সপিএসবি) উইগুর এবং শিনজিয়াংয়ে অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের দমনে ২০১৬ সালের পর থেকে ইচ্ছেমতো আটক এবং নজরদারির কৌশল হাতে নিয়েছে। মূলত যারা একটু ধর্মকর্ম করে তাদের বিরুদ্ধেই নজরদারি করা হয় বেশি। কর্তৃপক্ষ তাদের ‘উগ্রপন্থি’ বা জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় বা সন্দেহজনক মনে হয় তাদের ধরে ধরে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্রে’ রাখা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি অফিস বলছে, ২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ মুসলিমকে এসব ক্যাম্পে রেখেছে চীন।
এদিকে ২৯ জুন প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীনা কর্তৃপক্ষ শিনজিয়াংয়ে নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণে নানা দমনমূলক কৌশল ব্যবহার করছে। এর অংশ হিসেবে কাউকে বন্ধ্যা করে দেওয়া হচ্ছে আবার কারও জরায়ুতে স্থাপন করা হচ্ছে গর্ভনিরোধক ডিভাইস। ফলে শিনজিয়াংয়ে প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে নাটকীয়ভাবে। উইগুরের দুটি এলাকায় ২০১৫ ও ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে ৮৪ শতাংশ। এ হার ২০১৯ সালে আরও কমেছে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান জেনজ। তিনি চীনা কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপকে ধীরগতির জনতাত্ত্বিক ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
যদিও চীন এসব ক্যাম্পে উইগুরদের আটক করে রাখার বিষয়ে বলছে, পুনঃশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের জন্য উইগুরদের এসব ক্যাম্পে রাখা হয় যেন তারা বিচ্ছন্নতাবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধ লড়তে পারে।
ধর্মীয় উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ রুখতে এসব ক্যাম্পের প্রায়োজনীয়তার কথা বলে আসছে বেইজিং।
দেশটির দাবি, উইগুরদের মনোজগৎ থেকে জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন করতে তাদের ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষার’ ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।
ক্যাম্পে পাঠানোর কারণ হিসেবে চীনের পক্ষ থেকে উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর কথা যতই বলা হোক না কেন বিষয়টি আর এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া কিছু সরকারি নথি থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ‘হিজাব’ পরিধান করা এবং মুখে লম্বা দাড়ি রাখার কারণেও উইগুরদের আটক করে ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে।
এদিকে ক্যাম্প থেকে পালানো উইগুরদের বক্তব্য, সেখানে তাদের ওপর নানা অত্যাচার চালানো হয়েছে। অত্যাচার চালিয়ে জোর করে অপরাধ স্বীকারের ফরমে সই করতে বাধ্য করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য স্টেরিলাইজও করা হচ্ছে ক্যাম্পে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২০
টিএ