ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে নির্বাচনে কী ঘটবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২০
ট্রাম্প দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে নির্বাচনে কী ঘটবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র এক সপ্তাহ আগে আমেরিকানদের বলেছিলেন কোভিড-১৯ নিয়ে বেশি চিন্তা না করতে। কারণ তার মতে, 'করোনাভাইরাসে আসলে প্রায় কারোই কিছু হয় না, কেবল বয়স্ক এবং হৃদরোগীদের ছাড়া।

' এ কথা বলার এক সপ্তাহের মধ্যেই মিস্টার ট্রাম্পের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল পজিটিভ বলে ধরা পড়লো। শুধু তিনি নন, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলও পজিটিভ।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ৩২ দিন আগে এটা যে কী মারাত্মক এক ঘটনা, তার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এখন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। চিকিৎসা নিতে হবে। তার নির্বাচনী সমাবেশে যাওয়ার কোনো সুযোগই আর নেই। দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যে দ্বিতীয় টেলিভিশন বিতর্ক হওয়ার কথা, সেটি আদৌ হবে কি না, তা প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মেলানিয়া ট্রাম্প কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ বলে ধরা পড়ার পর এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে দেখা গেছে গত কদিন।

যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার নির্বাচনী প্রচারণার কী হবে? তার অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার কী প্রভাব পড়বে নির্বাচনে? যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন কী ঘটবে? নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কি একটি সাংবিধানিক সংকটের মুখে? 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণার কী হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা যে আজকে থেকে নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেল, এটা নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যে তার নির্বাচনী সমাবেশগুলো বন্ধ রাখতে হবে, তিনি যে আর আগের মতো সবকিছু করতে পারবেন না, সেটা তার উপদেষ্টারাও স্বীকার করছেন। শুক্রবার রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের থাকার কথা অরল্যান্ডোর এক নির্বাচনী সভায়। এই সপ্তাহান্তে যাওয়ার কথা উইসকনসিন। এসব সমাবেশ এখন আর সামনাসামনি হওয়ার সুযোগ নেই।

দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে দ্বিতীয় টেলিভিশন বিতর্ক হওয়ার কথা। প্রথম বিতর্কটি যেরকম বিশৃঙ্খল ছিল, তা নিয়ে সমালোচনার পর বিতর্কের নিয়ম-কানুনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কিন্তু মিস্টার ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা কোন দিকে যায়, তার ওপর এখন এই বিতর্কের ভাগ্য নির্ভর করছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এমন হতে পারে যে, কোয়ারেনটিনে থাকা প্রেসিডেন্ট সামনাসামনি বিতর্কের পরিবর্তে ভার্চুয়াল বিতর্কে অংশ নিতে পারেন।

এটির রাজনৈতিক সুবিধা কে পাবে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থার ওপর। যদি তিনি 'এসিম্পটোমেটিক' হন, অর্থাৎ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যেসব গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়, সেগুলো যদি তার না থাকে, তাহলে হয়তো মিস্টার ট্রাম্প আবারও করোনাভাইরাস যে সেরকম গুরুতর কোন ব্যাপার নয়, সেরকম একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করবেন। তিনি আবারও বলার চেষ্টা করবেন, এটা নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে।

আবার যদি তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, সেটা থেকেও তিনি রাজনৈতিক ফায়দা পেতে পারেন। তার জন্য সহানুভূতির ঢেউ উঠতে পারে, যেমনটা ঘটেছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অসুস্থতা থেকে কোন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ক্ষেত্রে তার বিরোধী শিবিরের লোকজনকেও বেশ সতর্ক থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগাগোড়াই সেগুলো উপেক্ষা করেছেন। অনেকক্ষেত্রে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, এমন অভিযোগও আছে।

এই মহামারির মধ্যেই তিনি বড় বড় নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন। হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে নিয়মিত নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এখন ট্রাম্পের বিরোধী শিবিরের লোকজন যদি বলার চেষ্টা করেন যে, প্রেসিডেন্ট তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করছেন, সেটাকে রিপাবলিকানরা কাজে লাগাতে পারে বিরোধীপক্ষের ''হৃদয়হীনতা এবং সুবিধাবাদিতার‌'' উদাহারণ হিসেবে।

এই ঘটনা করোনাভাইরাসকে আবার বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসবে এবং সেটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্ষতি করতে পারে, যেটি তিনি চাইছিলেন না। এর উল্টোটাও হতে পারে। তার সমর্থকরা প্রেসিডেন্টের পক্ষে আরও বেশি করে জোট বাঁধতে পারে।

যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন কী ঘটবে?

হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যে চিকিৎসক, তিনি বেশ আশাবাদী। তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট কোন বিঘ্ন ছাড়াই তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই অবস্থা দ্রুত পাল্টে যেতে পারে। লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করে। লোকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স ৭৪ বছর। হোয়াইট হাউজের চিকিৎসকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি শারীরিকভাবে স্থূলকায়, অর্থাৎ উচ্চতা অনুযায়ী তার যা ওজন থাকা উচিৎ, তার চেয়ে বেশি। এসব কিছুর কারণে মিস্টার ট্রাম্প সেই দলে পড়েন, যাদের জন্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

যদি প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে যান, তখন কী করতে হবে, তা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে মার্কিন সংবিধানে।

বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা জন সোপেল বলেন, মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে বলা আছে অসুস্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট অক্ষম হয়ে পড়লে দায়িত্ব নেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সুতরাং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু হলে, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেই তার জায়গা নিতে হবে, সেজন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে হয়তো তাকে অল্প কিছুদিনের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে।

২৫তম সংশোধনীর এই ধারায় উল্লেখ আছে, প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সাময়িকভাবে তার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে। যখন আবার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন, তখন আবার এই ক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে পারেন।

কিন্তু যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তখন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য এর পরেই আছেন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে, ন্যান্সি পেলোসি এরই মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আইসোলেশনে গেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ন্যান্সি পেলোসি হচ্ছেন বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির। কাজেই তার কাছে ক্ষমতা যাওয়ার মানে হচ্ছে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ডেমোক্রেটদের হাতে চলে যাওয়া। ওয়াশিংটন পোস্ট এরকম একটি পরিস্থিতির কথা কল্পনা করে এ বছরের শুরুতে লিখেছিল, "ট্রাম্প এবং পেন্সের কাছ থেকে পেলোসির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে কোন চেষ্টার বিরুদ্ধে নিশ্চিতভাবেই অনেক আইনি এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আসবে। যুক্তরাষ্ট্রে যখন একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দরকার খুব বেশি, তখন এই ঘটনা সেখানে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। "

কাজেই এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র একটি সাংবিধানিক সংকটের আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সূত্র: বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।