ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে দেশটির আপদকালীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়াও অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট বিশাল ছাইয়ের স্তূপের নিচে তলিয়ে গেছে ১১টি গ্রাম।
রোববার (০৫ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগ্নেয়গিরির ছাই বাড়িঘরের ছাদ পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘন ধোঁয়ার মেঘ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে দেওয়ায় দিনের বেলাতেও আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তত ৫৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে গুরুতরভাবে পুড়ে গেছেন। অগ্নিদগ্ধদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অগ্ন্যুৎপাতে দেশটির লুমাজাং প্রদেশের অন্তত ১১টি গ্রাম ছাইয়ের নিচে সম্পূর্ণ চাপা পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো গ্রামবাসীদের অনেকে মসজিদ এবং অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার বিপর্যয় মোকাবেলা সংস্থা বিএনপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯০০-এর বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দম বন্ধ করা ধোঁয়া আর বিদ্যুৎ সংযোগ পুরো বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে সেখানে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া অগ্ন্যুৎপাতের পর ঝড়বৃষ্টিতে আগ্নেয়গিরির লাভা ও ধ্বংসাবশেষ মিশে কাদায় পরিণত হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।
তরিকুল হক নামের স্থানীয় এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ওই এলাকার সঙ্গে নিকটবর্তী মালাং শহরের সড়ক এবং সেতু যোগাযোগও অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিএনপিবি জানিয়েছে, ছাইয়ে চাপা পড়া ভবনগুলোতে আটকে পড়া দশজনকে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার বলছে, আগ্নেয়গিরির ছাই জ্বালামুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, এই ছাই ১৫ হাজার মিটার (৫০ হাজার ফুট) উঁচু পর্যন্ত উঠতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান সংস্থার অগ্ন্যুৎপাত বিশেষজ্ঞ ক্যাম্পবেল বিগস্ বিবিসিকে বলেন, বেশিরভাগ বিমান যে উচ্চতায় ক্রুজ করে, সেমেরু আগ্নেয়গিরির ছাই তার চেয়েও ওপরে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, এই ছাইয়ের মেঘ এড়াতে এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে হবে। বিমানের ইঞ্জিনের ঠাণ্ডা অংশে এই ছাই ঢুকলে তা জমাট বেধে যায়। তাতে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও ছাইয়ের কারণে পাইলটরা স্পষ্ট দেখতে পান না। বিমানের ভেতরে বাতাসের মান খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন অক্সিজেন মাস্ক পরা অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরি থেকে নিয়মিতভাবে অগ্ন্যুৎপাত হয়। প্রায় এই আগ্নেয়গিরি থেকে চার হাজার ৩০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত ছাই নির্গত হয়। সেই হিসাবে শনিবার শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাত অনেক শক্তিশালী বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পবেল বিগস্। তিনি বলেন, এই ছাইয়ের মেঘ ধীরে ধীরে বাতাসে মিশে চলে যাবে।
ইন্দোনেশিয়ার ১৩০টি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির একটি হল মাউন্ট সেমেরু। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ৬৭৬ মিটার ওপরে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে যেতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
ছাইয়ের নিচে ১১ গ্রাম, দেখুন ছবিতে
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২১
এনএসআর