নব্বইয়ের দশকের চীনা-৯ এমএম পিস্তল থেকে হালফিলের জার্মান এমপি-৫ সাব-মেশিনগান বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের অস্ত্রসম্ভারই রয়েছে এখানে।
আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা পুনর্দখলের পরে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকাজুড়ে বেআইনি অস্ত্র কারবারে নতুন জোয়ার এসেছে। হালকা অস্ত্রের পাশাপাশি জোগান বেড়েছে মাঝারি ও ভারী মেশিনগান, মর্টার, রকেট লঞ্চারের।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে ব্যবসার ধরনও। চালু হয়েছে ‘হোম ডেলিভারি’ পদ্ধতি। নেটমাধ্যমে রীতিমতো তালিকা দেখে পছন্দের অস্ত্র বাছাই করে ডিলারকে জানালেই লোক মারফত তা পছন্দের জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
অস্ত্রের দামও নাগালের মধ্যেই। একটু পুরনো মডেলের কালাশনিকভ রাইফেল বা পিস্তল মেলে সস্তা স্মার্টফোনের চেয়েও কম দামে। তার চেয়ে কয়েক হাজার পাকিস্তানি রুপি বেশি খরচ করলেই মিলবে বিশ্বখ্যাত অস্ত্রনির্মাতা ‘হেকলারের’-এর এমপি-৫।
আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার প্রবেশের পর থেকেই ডেরা আদমখেলের অস্ত্র বাজারের রমরমা ব্যবসা শুরু। খাইবার-পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই গঞ্জ ছিল আফগান মুজাহিদদের অস্ত্রাগার।
খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং সন্নিহিত আফগান অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার চল ব্রিটিশ জামানা থেকেই। ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও আকর্ষিত হয় পাকিস্তানের অস্ত্র-বাজারে। বেআইনি অস্ত্র রফতানির ঘাঁটি হয় করাচি।
তবে সব অস্ত্রই আসল নয়। আদমখেলের কারিগরেরা ইটালিয়ান ব্যারেটা বা বেলজিয়ান ব্রাউনিং পিস্তলের হুবহু নকল তৈরিতেও সিদ্ধহস্ত। পাল্লা বা মারণক্ষমতা প্রায় সমান হলেও নকল অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার সময় আওয়াজ এবং ঝাঁকুনি (রিকয়েল) বেশি হয়।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ফৌজ আফগানিস্তান ছাড়ার পরে তাদের ফেলে যাওয়া সাঁজোয়া গাড়ি, হালকা কামান (মাউন্টেন আর্টিলারি)-ও বিক্রি হয়েছে পাকিস্তানের চোরাবাজারে।
২০২১ সালের ৩০ আগস্ট রাতে কাবুল ছাড়ে শেষ মার্কিন সেনা। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তারপরই তালেবান কাবুল দখলের মাধ্যমে দেশটিতে নতুন সরকার গঠন করে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, আরব নিউজ, দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
এসআইএস