রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ নিয়ে কঠোর সতর্কতা সত্ত্বেও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বেশিরভাগ বাসিন্দাদের জীবন চলছে স্বাভাবিকভাবেই।
সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে যখন উত্তজনা চরমে, তখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিউপলের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনের চিত্র তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্কে শিশুরা অন্য সময়ের মতোই খেলছে, কিশোর-কিশোরীরা বরফের ওপর স্কেটিং করছে, শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমলে চলছে কেনাকাটা। যদিও এই শহরটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে যখন একের পর এক সতর্কবার্তা আসছে, তখন এই শহরটির রেস্তোরাঁ খোলা রয়েছে, লাইভ মিউজিক প্রোগ্রামও চলছে।
রাশিয়ার আক্রমণের শঙ্কায় নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে বিশ্বের অনেক দেশ। তখন রুশ সীমান্তঘেষা মারিউপল শহরের চিত্র সত্যিই অবাক করার মতো। এই পরিস্থিতিকে ‘ইঁদুর-বিড়াল খেলা’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রতিরক্ষা পর্যবেক্ষকরা বলেন, নানা পক্ষের কূটনৈতিক আলোচনার পর অবশেষে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। তবুও পশ্চিমারা বলছে, রাশিয়ার হামলা আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পরিষ্কারভাবে বলেছে, কোনো প্রকার পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই যেকোনো মুহূর্তে হামলা হতে পারে।
এর আগেও ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছিল।
মারিউপল শহরের কোস্ট গার্ড ইউনিটের ডেপুটি হেড ইহোর চেরটভ বলেন, মনে হচ্ছে আমাদের নিয়ে আমরা যতটা না উদ্বিগ্ন, তার চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন পশ্চিমারা।
মারিউপল শহরটি এক সময় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে জিম্মি ছিল। ২০১৪ সালে এই শহরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচজন বিদ্রোহী এবং দুজন ইউক্রেনীয় সেনা মারা যান। লড়াইয়ের একপর্যায়ে বিদ্রোহীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে বলে দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর কিছু দিন পরই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে নেয় রাশিয়া।
তাই রাশিয়ার হুমকি সম্পর্কে এই শহরের বাসিন্দারা খুব ভালো করেই জানেন। সেখানে ২০১৪ সালের আগে রাশিয়ান-সমর্থিত সংঘাতে অন্তত ১৪ হাজার মানুষ মারা গেছেন। তারপরও এই শহরের অনেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছাড়ায় থাকতে চান না।
অপর দিকে, চলমান উত্তেজনার মধ্যে মারিউপল শহরের অনেকেই প্রাথমিক যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যুদ্ধে আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে নিজেকে গড়ে তুলছেন।
এমন একজন মেরিনা হেটমানোয়া। তিনি একজন মেডিক্যাল প্রতিনিধি। যেকোনো সময় হামলা আসতে পারে—এমন শঙ্কা তিনিও করছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি রাশিয়ায় থাকতে চাই না। আমি পশ্চিম ইউক্রেনে যাব, নয়তো পোল্যান্ডে, নয়তো জার্মানিতে। আমি জানি না, আমি মরতে চাই না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
জেএইচটি