ইউক্রেন ইস্যুতে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দেশটির সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা থেকে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এরই মধ্যে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করে ক্রেমলিন।
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই ঘোষণার পর কিছু এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দেশটি।
বুধবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ক্রিমিয়া অঞ্চল থেকেও ‘আংশিক’ সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। সেই সৈন্যদের ইউক্রেন থেকে দূরের একটি মূল ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে করে নতুন কোনো সংকট দেখা দিলে দ্রুত সেনাদের আবার মোতায়েন করা যায়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সামরিক মহড়া শেষ করে সেনারা ট্রেনে করে মূল ঘাঁটিতে ফিরছে। একই সঙ্গে ট্যাঙ্কসহ সামরিক যানও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ওপেন সোর্স কনফ্লিক্ট ইন্টেলিজেন্স টিমের রুসলান লেভিয়েভ তাদের স্থায়ী ঘাঁটির একটি মানচিত্র তৈরি করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু সংখ্যক সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একই সময়ে টিওএস-১এ থার্মোবারিক রকেট লঞ্চারের মতো ভারী অস্ত্রগুলো ভলগা নদীর পাশের শহর সামারার থেকে কুরস্কে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা পর্যবেক্ষকরা বলেন, নানা পক্ষের কূটনৈতিক আলোচনার পর অবশেষে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। তবুও পশ্চিমারা বলছে, রাশিয়ার হামলা আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পরিষ্কারভাবে বলেছে, কোনো প্রকার পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা হতে পারে।
এর আগেও ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে বলেও দাবি করা হয়।
প্রসঙ্গত, আলোচিত ক্রিমিয়া অঞ্চলটি এক সময় ইউক্রেনের অংশ ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের নভেম্বরে রাজধানী কিয়েভে বিক্ষোভের মাধ্যমে ইউক্রেনের সংকট শুরু হয়। এ সময় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দমননীতির পরও বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ।
ওই ঘটনার পরের মাসেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে নেয় রাশিয়া। এই অঞ্চলটির প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ জাতিগতভাবে রুশ। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটি হস্তান্তর করেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের কাছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে ইউক্রেন স্বাধীনের পর ক্রিমিয়া হাতছাড়া হয়ে যায় রাশিয়ার।
সারা বছর সচল রাখার মতো উষ্ণ পানির গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে ইউক্রেনকে এখন ব্যবহার করে রাশিয়া। ক্রিমিয়ার সেভাস্তাপোলে নৌঘাঁটি কৌশলগত কারণে রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাল্টিক সাগরে প্রবেশের জন্য রাশিয়ার পথ হচ্ছে এই বন্দর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
জেএইচটি