ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভের স্কুল ও বহুতল আবাসিক এলাকায় রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন ১৮ জন।
ইউক্রেনের জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
চেরনিহিভ শহরটি কিয়েভ থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। সেখানে রুশ বাহিনী উত্তর দিক থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে।
চেরনিহিভের উপ-মেয়র রেজিনা গুসাক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাশিয়ার ‘বোমা হামলায়’ শহরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা থেকে প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবন থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। উদ্ধারকারীরা স্ট্রেচারে মরদেহ বহন করছেন।
চেরনিহিভ অঞ্চলের গভর্নর ভায়াচেস্লাভ চৌস বলেন, দুটি স্কুল ও আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। উদ্ধারকারীরা ওই এলাকায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকেই রাশিয়া বলছে যে, তারা বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে না। যদিও এর বিপরীতে ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে।
ইউক্রেন বলছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত ৩৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
তবুও পুতিন বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক ফোনালাপে ইউক্রেনে তার আগ্রাসন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন।
‘সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন’
ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্র রয়েছে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ায়। সেই কেন্দ্রে রুশ হামলার পর আগুল লেগে যায়। এ তথ্য জানিয়ে বিশ্বনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখন আগুন জ্বলছে’। ওই ঘটনায় তিনি রুশ সেনাদের দায়ী করেছেন।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতাসহ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি সাধারণ নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে ছড়ানো গুজবে সতর্ক করা হয়েছিল যে, তারা বিশ্বকে পারমাণবিক ছাইয়ে ঢেকে দেবে। এখন এটি কেবল একটি সতর্কতা নয়, এটি বাস্তব’।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে শুক্রবার (৪ মার্চ) নবম দিনের মতো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ দেশটি ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় অনেকেই আটকে পড়েছেন। তারা খাদ্য-চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে।
তাই যুদ্ধবিরতির পথ খুঁজতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ‘শান্তি আলোচনায়’ বসে ইউক্রেন ও রুশ প্রতিনিধিদল। ওই আলোচনায় কিয়েভ আশানুরূপ ফল পায়নি। যুদ্ধবিরতির বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বা তাদের কাছে সহায়তা পাঠাতে ‘মানবিক করিডর’ দিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়ায়। দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হয় বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
মানবিক করিডরের বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা বেসামরিক লোকদের দ্রুত সরিয়ে নিতে পারবে কিয়েভ। একই সঙ্গে তাদের কাছে খাদ্য-চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করতে পারবে। রুশ সেনারা ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চল ঘিরে ফেলার কারণে কয়েক দিন ধরেই সেই সংকট প্রকট হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২২
জেএইচটি