ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সুইস ক্রেডিটে সাবেক আইএসআই প্রধানের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
সুইস ক্রেডিটে সাবেক আইএসআই প্রধানের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস

ঢাকা: সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক থেকে গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সাবেক প্রধান আখতার আবদুর রহমান খানের নাম উঠে এসেছে।

 

আবদুর রহমান আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় মুজাহিদিন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খবর ডনের।

গোপন তথ্য ফাঁসকারী 'সুইস সিক্রেটস' নামে পরিচিত এ বিশাল তথ্যভাণ্ডারটি 'সাডেজেশ জেইতাং' নামে একটি জার্মান সংবাদপত্রকে এ তথ্য দিয়েছে। এতে মাদক চোরাচালান, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির জন্য কুখ্যাত গ্রাহকদের গোপন সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের একটি নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) মতে সম্ভাব্য সমস্যাযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে সম্পদের পরিমাণ আট বিলিয়নেরও বেশি৷

এসব তথ্য ব্যাংকের বর্তমান হিসাবগুলো থেকে নয় বরং যেসব ব্যাংক হিসাব ১৯৪০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খোলা ছিল, সেগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতাকারী বেশ কয়েকটি দেশের জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এবং তাদের সন্তানরাও ক্রেডিট সুইসে গোপনে অর্থ জমা করেছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে জেনারেল আখতার আবদুর রহমান খান আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার নগদ এবং অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে।

সূত্র: Gen Zia’s spy chief among those named in Credit Suisse leak

সংবাদপত্রটির মতে, জেনারেল আখতারের তিন ছেলের নামে ১৯৮৫ সালে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছিল, যদিও জেনারেল কখনও সাহায্যের অর্থ চুরির অভিযোগের মুখোমুখি হননি। অনেক বছর পরে সংবাদপত্রটি জানায়, ফাঁস হওয়া তথ্যগুলো থেকে দেখা গেছে যে ওই ব্যাংক হিসাবটিতে অর্থের পরিমাণ বেড়ে ৩.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, আফগানিস্তানে রাশিয়ার উপস্থিতির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুজাহিদিন যোদ্ধাদের জন্য সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন সিআইএর সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এ প্রক্রিয়ার শেষ প্রাপক ছিল সেই সময়ে আখতারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ (আইএসআই)।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে আখতার আফগান জিহাদিদের হাতে সিআইএ’র নগদ অর্থ পাইয়ে দিতে পারদর্শী ছিলেন। এ সময়ের মধ্যেই তার তিন ছেলের নামে ক্রেডিট সুইস অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছিল।

ওসিসিআরপি প্রতিবেদনটি জানিয়েছে, ক্রেডিট সুইস-এ আখতার পরিবারের দু’টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে একটি - আখতারের তিন ছেলের নামে যৌথভাবে ছিল, যা ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই খোলা হয়েছিল।  একই বছরে সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান মুজাহিদিনদের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ কোথায় যাচ্ছিল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ২০০৩ সাল নাগাদ, এ হিসাবটির মূল্য দাঁড়িয়েছিল কমপক্ষে পাঁচ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (সেই সময়ে ৩.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। দ্বিতীয় হিসাবটি ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে শুধুমাত্র আকবরের নামে খোলা হয়েছিল, নভেম্বর ২০১০ নাগাদ, যেটির মূল্য ছিল ৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কেরও বেশি (তখনকার সময়ে ৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

যদিও জেনারেল খানের এক ছেলে এ প্রকল্পের প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, এ তথ্য সঠিক নয় এবং অনুমানভিত্তিক।

২০১৬ সালে তথাকথিত পানামা পেপারস, ২০১৭ সালের প্যারাডাইস পেপারস এবং গত বছরের প্যান্ডোরা পেপারস-এর পর এ তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটল।

নাম ফাঁস হয়েছে এমন ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং সাবেক ক্ষমতাধর মিশরীয় নেতা হোসনি মুবারকের দুই ছেলে ও ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা, যারা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির ফাঁদে পড়েছেন।

তথ্যটিতে আরও বলা হয়েছে, একবার হংকংয়ের একজন স্টক ব্যবসায়ীকে ঘুষের অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, একজন পুঁজিপতি যিনি তার লেবানিজ প্রেমিকা, একজন ফিলিপিনো মানব পাচারকারী এবং মিশর থেকে ইউক্রেনের অসাধু রাজনীতিবিদদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ভ্যাটিকান-মালিকানাধীন একটি ব্যাংক হিসাব লন্ডনে একটি কথিত প্রতারণামূলক প্রকল্পে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা একটি প্রধান মামলাসহ বেশ কয়েকজন আসামির একটি ফৌজদারি মামলার বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়।

ওসিসিআরপির মতে, উক্ত তথ্য থেকে আরও জানা যায়, গোটা বিশ্ব থেকে ১৫ গোয়েন্দা ব্যক্তি অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সদস্যরা ক্রেডিট সুইস-এ তাদের হিসাব খুলেছেন।

ক্রেডিট সুইস বলেছে, সুইজারল্যান্ডের কঠোর গোপনীয়তা আইন এটিকে একক মক্কেলদের সম্পর্কে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করার অনুমতি দেয় না, তবে একটি বিবৃতিতে এটি ব্যাংকের কথিত ব্যবসায়িক অনুশীলন সম্পর্কে অভিযোগ এবং অনুমান দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, এ যুক্তি দিয়ে যে সাংবাদিকদের দ্বারা উন্মোচিত বিষয়গুলো প্রসঙ্গের বাইরে বাছাইকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে, যেখানে ব্যাঙ্কের ব্যবসায়িক আচরণের উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা রয়েছে।

আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে আরও অনেক কিছুই জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
টি আর/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।