রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২১ মার্চ) ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মার্কিন কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার ওপর একটি প্রদর্শনী চলছে।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ২০১৭ সালে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। এর ফলে অন্তত ৭ লাখ ৩০ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা নিজ দেশ ও ঘরবাড়ি ছেলে প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। রাখাইন রাজ্যে হত্যা, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে সেনারা। পরে ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে।
ওই নৃশংসতার গুরুত্ব দ্রুত স্বীকার করার প্রচেষ্টায় প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল মার্কিন কর্মকর্তারা ও একটি আইন সংস্থা। কিন্তু তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দৃঢ়ভাবে তা অস্বীকার করেছিলেন।
এবারই প্রথম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এ বিষয়ে ‘আইনি ও বাস্তব বিশ্লেষণের’ নির্দেশ দিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য রয়টার্সকে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। বিশ্লেষণটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে। এর ফলে মিয়ানমারের জেনারেলদের জবাবদিহি করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে তুলবে বলে ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে।
তবে এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত মিয়ানমারের দূতাবাসের কর্মকর্তারা এবং সামরিক সরকারের একজন মুখপাত্র রয়টার্সের ইমেইলের তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
যদিও মিয়ানমারের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর কথা অস্বীকার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ২০১৭ সালে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ পরিচালনা করছে।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, সামরিক অভিযানের মধ্যে ‘গণহত্যা’ চালানো হয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটন সেই সময় নৃশংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূলকরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে এই শব্দবন্ধের কোনো আইনগত সংজ্ঞা নেই।
মার্কিন সিনেটর ও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য জেফ মারকলি। তিনি ২০১৭ সালে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হলেও নিষ্ঠুর শাসনকে দায়ী করার জন্য একটি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২২
জেএইচটি