লাদাখে সংঘাতের পর থেকে ভারত-চীনের সম্পর্কের অবনতি হয়। এর ফলে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত সফর করেননি চীনের কোনো বড় নেতা।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফর করলেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব এখন কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের পক্ষে। এশিয়ার অনেক দেশও ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু এখনো প্রকাশ্যে রাশিয়ার বিরোধিতা করেনি ভারত ও চীন। জাতিসংঘে যতবার ভোটাভুটি হয়েছে, ততবারই দেশ দুটি ভোটদানে বিরত থেকেছে।
এ পরিস্থিতিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, ওয়াং-এর সফরের দুটি উদ্দেশ্য আছে। প্রথমত, লাদাখ-পরবর্তী সময়ে আবার দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা শুরু করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, এই বছরের শেষে বেইজিংয়ে ব্রিকসের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে আগাগোড়া সাসপেন্স বজায় ছিল। গত সপ্তাহে গণমাধ্যমকর্মীদের এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছিলেন, তার কাছে কোনো খবর নেই। বেইজিং থেকেও জানানো হয়নি ওয়াং ভারতে আসবেন। কিন্তু চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে নামার পর জানা যায়, তিনি ভারতে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের একটি অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছিলেন, গত দুই বছরে ভারত ও চীনের সম্পর্ক এই জায়গায় পৌঁছাবে। চীনের ক্ষেত্রে ২০২০ সালের মে মাস থেকে সামরিক ক্ষেত্রে দূরত্ব যেমন আছে, তেমনই কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর সমর্থন এবং আমাদের নীতি যাতে তারা বোঝে সেই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে পাকিস্তানে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের বৈঠকে প্রধান বক্তা ছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানে তিনি বলেন, কাশ্মীর নিয়ে ইসলামিক দেশের বন্ধুদের আশঙ্কার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। এরপরই ভারত তার মন্তব্যের বিরোধিতা করে দুটি বিবৃতি দেয়।
এরপর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। অন্য কোনো দেশের এ বিষয়ে কথা বলার বা আলোচনা করার সুযোগ নেই। অধিকারও নেই। পাকিস্তানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে কাশ্মীরের প্রসঙ্গ তুলেছেন, তার তীব্র বিরোধিতা জানান তিনি।
অবশ্য ভারত সফরের আগে ওয়াং আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবান নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। গত বছর আগস্টে তালেবানরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে এই প্রথম চীনের উচ্চ পর্যায়ের কোনো নেতা কাবুলে পা দিলেন। আফগান উপ প্রধানমন্ত্রীর অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীনের আশঙ্কা ছিল, আফগানিস্তানের মাটি থেকে তাদের ওপর আক্রমণ হতে পারে। তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, এ রকম কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না। তবে বিবৃতিতে উইগুরদের নাম নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময় ১৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
এনএসআর