ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এতে পিছিয়ে নেই অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়নি। তবে তারা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে দুর্বল করার পথ বেছে নিয়েছে।
রাশিয়ার ওপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট কাস্টেলাম ডট এআই। জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা
কাস্টেলাম ডট এআই জানায়, ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের ওপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ মেয়েও রয়েছেন।
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার ওপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি।
আরও বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬।
টার্গেটে মিডিয়া ব্যক্তিত্বরাও
কানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও। চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ ১০ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও। সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা।
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি। গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
নিষেধাজ্ঞায় পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র। তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনো তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট। কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের ওপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট দুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান। রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি। তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও। ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ৮৮টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ। মোট ৭ হাজার ৩৮৬টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৬২টি দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে। এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬)। এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)।
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য কী
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির ওপরে। ৩ হাজার ৯১৫টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত। আর বাকি ৪৩৭টি দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের ওপরে।
রাশিয়ার পাল্টা পদক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন। অন্যদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিরম পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন, দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুবলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
জেএইচটি