মাত্র ছয় দিন আগেও বিতর্ক হচ্ছিল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মুমতাজের সমাধি তাজমহল নিয়ে। মহলের ভূগর্ভস্থ অংশের ২২টি তালাবদ্ধ কক্ষ খোলা না খোলা নিয়ে রিট ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশেষজ্ঞগোষ্ঠীর মধ্যে যখন আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে, তখন সেখানকার কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে কক্ষগুলো খোলা হয়েছিল। এএসআই কক্ষগুলো খুলে দেওয়ার ছবি এ মাসের শুরুতে প্রকাশ করে। ছবিগুলো সংস্থার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
এএসআই আগ্রা সার্কেলের প্রধান আর্কিওলোজিস্ট রাজ কুমার প্যাটেল জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের করা সংস্কার কাজের ছবিগুলো সকলের দেখার উদ্দেশে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে তাজমহলের রহস্যেঘেরা সেই ২২টি কক্ষ খোলার আবেদন নাকচ করে দেন এলাহবাদ হাইকোর্ট। এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজেপির অযোধ্যা ইউনিটের মিডিয়া ইনচার্জ দাবি করে ড. রজনীশ সিং নামে এক ব্যক্তি এলাহাবাদ হাইকোর্টে তাজমহলের ২২টি কক্ষ খুলে দিতে সিদ্ধান্ত চেয়ে একটি রিট করেছিলেন। রিটের শুনানি করেন আদালতের বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায়। শুনানিতে রজনীশ সিংকে তাজমহল সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করতে পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া পিআইএল সিস্টেমকে উপহাস করতে না করেন।
ড. রজনীশ সিং তার রিটে তাজমহলের তালাবদ্ধ ওই কক্ষগুলোয় কী আছে দেখতে ও সত্য যা-ই হোক প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, মহলের ভূগর্ভস্থ অংশে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে। এ ছাড়া তাজমহল একটি শিব মন্দির ও ভবনটি তেজো মহালয়া নামে পরিচিত বলেও উল্লেখ করেন। স্মৃতিস্তম্ভের বাস্তব ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরতে আদালতের সিদ্ধান্ত চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আদালত তার রিট খারিজ করে দেন।
বিচারক ডি কে উপাধ্যায় বলেন, আদালত এ রিট গ্রহণ করতে পারে না। যেকোনো ঐতিহাসিক গবেষণা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত। এ স্থাপনা বা এর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ইতিহাসবিদ-শিক্ষাবিদদের অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য।
আদালতের এ সিদ্ধান্তের পর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কর্মকর্তারা জানান, বন্ধ থাকা কক্ষগুলোয় কোনো গোপনীয়তা নেই। কক্ষগুলো শুধুই ভবনের কাঠামোর অংশ।
এএসআই জানায়, নদীর ধারে ভূগর্ভস্থ সেল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে কক্ষগুলো খোলা হয়। এ সময় দেয়ালের ক্ষয় হয়ে যাওয়া অংশের পলেস্তারা মেরামত করা হয়। আগ্রা সার্কেলের কর্মকর্তা জানান, তারা শুধু তাজমহলই নয়, জামা মসজিদ, ইতমাদ-উদ-দৌলা ও আগ্রা ফোর্টে সংস্কার কাজ করেছিলেন।
তাজমহলের যে কক্ষগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেগুলো মূলত ভবনের নিচের ভাগে উত্তর দিকে। সেখানে লাল স্যান্ডস্টোনের বড় প্ল্যাটফর্ম রয়েছে তার পাশ থেকে দুটি সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। সেখানে ১৭টি কক্ষ আছে, যা বন্ধ। এর নিচে রয়েছে একটি অলিন্দ। সেই অলিন্দ ঘুরে গিয়ে পৌঁছেছে মূল সমাধিস্থলের নিচে। বিশ্লেষকদের মতে, পাথরের তৈরি ঘরগুলোতে বেশি মানুষজনের ভিড় হলে তাদের নিশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মূল কাঠামোর শ্বেতপাথরের ক্ষতি হতে পারে। সে কারণেই ওই ঘরগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ১৭ মে, ২০২২
এমজে