চীনের কুনমিং থেকে গুয়ানঝি অঞ্চলে ১৩৩ যাত্রী নিয়ে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ প্লেনের দুর্ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল! প্লেনটিতে প্রযুক্তিগত কোনো ত্রুটি ছিল না।
প্লেনের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার ও সেটি নিয়ে দুমাস ধরে তদন্তের পর এসব তথ্য পেয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার সপ্তাহখানেক পর প্লেনটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার সম্ভব হয়। এরপরই সেটি তদন্তে নেমে পড়েন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া গেছে। যদিও দুর্ঘটনার সময় ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তদন্তকারীরা সেখান থেকে কোনো তথ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
চলতি সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনেও বিষয়টি নিয়ে একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ব্ল্যাকবক্স থেকে প্রাপ্ত ফ্লাইট ডেটা ইঙ্গিত দিচ্ছে; ককপিটে থাকা কেউ ইচ্ছা করেই প্লেনটিকে আকাশ থেকে নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে এসেছিল। তিনি বা তারা চাইছিলেন যেন বড় আকারে দুর্ঘটনা ঘটে।
আদৌ এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা সে ব্যাপারে মার্কিন জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ডের (এনটিএসবি) কর্মকর্তারা কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে চীনা নিয়ন্ত্রকদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়, তারাও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। প্লেন দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীনের সিভিল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএএসি)। এ ব্যাপারে সংস্থাটির কাছ থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পর চীনা কর্মকর্তাদের করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্লেনটিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। এরপর থেকেই মূলত জোরালো হয়- আকাশযানটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে মাটিতে আছড়ে ফেলা হয়েছিল কিনা! মঙ্গলবারের (১৭ মে) আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কেউ হয়ত ককপিট থেকেই নির্দেশনা নিয়ে বিমানটি পরিচালনা করছিলেন। ’
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, প্লেনটি যখন নাক বরাবার মাটির দিকে আসছিল, তখন পর্যন্তও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বা কাছাকাছি থাকা কোনো আকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি প্লেনটির পাইলটরা। এ থেকে ধারণা করা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবেই আকাশ থেকে প্লেনটি মাটিতে আছড়ে ফেলা হয়েছিল। সূত্র বলছে, কোনো ‘স্বেচ্ছাসেবী’ দ্বারা এ ঘটনা ঘটেছে কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এনটিএসবি চেয়ারম্যান জেনিফার হোমেন্ডি গত ১০ মে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, তদন্তের স্বার্থে তাদের বোর্ড কর্মকর্তাসহ বোয়িংয়ের কজন চীন ভ্রমণ করেছিলেন। প্লেনটিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না বলেই প্রতিবারের তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। যদি কোনো নিরাপত্তা ইস্যু থেকে থাকে তাহলে বোর্ড জরুরি নিরাপত্তা সুপারিশ জারি করবে বলেও তিনি জানান।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণগুলো নির্দিষ্ট করে প্রতিবেদনের চূড়ান্ত সংকলন করতে দুই বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা মানবিক বা প্রযুক্তিগত কারণে হয়ে থাকে। এ দুর্ঘটনাটি কিছুটা ব্যতিক্রম।
গত মার্চের ২১ তারিখ ১৩৩ যাত্রী নিয়ে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়। প্লেনটি একটি পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয় এবং এতে থাকা ১৩৩ যাত্রী-ই নিহত হন। প্লেনটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩২২৫ ফুট উচ্চতায় ৩৭৬ নটিক্যাল মাইল গতিতে উড়ছিল।
আরও পড়ুন: চীনে ১৩৩ যাত্রী নিয়ে প্লেন বিধ্বস্ত
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫, ১৮ মে, ২০২২
এমজে