পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজহারিকে মারধরের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (২১ মে) তার মেয়ে ইমান জয়নব মাজহারি এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানান।
টুইটারে ইমান জয়নব বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে লাহোর দুর্নীতি দমন শাখা তাকে (শিরিন মাজহারি) নিয়ে গেছে।
ইমান জয়নব আরও বলেন, আমার মাকে পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তারা মারতে মারতে নিয়ে গেছেন। মায়ের কিছু হলে তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদের পরিবারের কাউকে আগে থেকে না জানিয়েই তার মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে ঘটনাকে ‘অপহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করতে চান ইমান জয়নব।
পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, শিরিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তথ্য পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থার পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
শিরিনকে গ্রেফতারের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, নারী পুলিশ কর্মীরা তাকে টেনে গাড়িতে তুলছেন। এ সময় শিরিন বলছেন, আমাকে স্পর্শ করবেন না।
এদিকে, ইসলামাবাদের বাসভবনের বাইরে থেকে শিরিন মাজহারিকে গ্রেফতারের পর সরকার ও বিরোধী- উভয় পক্ষের সাংবাদিক, বিশ্লেষক এবং রাজনীতিবিদগণ এর সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছেন।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সিনেটর মোস্তফা নওয়াজ খোখার এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার গ্রেফতারের ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি রাজনৈতিক নিপীড়নের সবচেয়ে খারাপ রূপ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) ও পিপিপি’র নেতা নাফিসা শাহ বলেন, শিরিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তাকে গ্রেফতার করা ভুল।
গ্রেফতারের এ ঘটনাটি রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার বলে মন্তব্য করেছে পাকিস্তানের হিউম্যান রাইটস কমিশন।
সাংবাদিক মাজহার আব্বাস এক টুইট বার্তায় বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে প্রথম রাজনৈতিক বন্দী শিরিন মাজহারি। সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা অতীত থেকে শিক্ষা নিতে প্রস্তুত নয়। আমি তার (শিরিন) সব মতামতের সঙ্গে একমত নই; কিন্তু তার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাই। এটি অপমান।
ডনের খবর থেকে ধারণা পাওয়া যায়, ৫০ বছরের পুরনো একটি সন্দেহজনক সম্পত্তি আয়ত্বে রাখার মামলায় শিরিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজনপুর জেলায় ওই জমি দখলের কারণে গত ১১ মার্চ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দেন ডন নিউজের উপস্থাপক আবসা কোমল। তিনি বলেন, ৫০ বছরের পুরনো একটি সন্দেহজনক সম্পত্তির মামলায় শিরিনের গ্রেফতার নিন্দনীয়।
গ্রেফতারের ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি বেআইনি আচরণ, স্পষ্ট হয়রানি এবং মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টের আইনি উপদেষ্টা রীমা ওমর।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক স্কলার মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, গ্রেফতারের এ ঘটনা ইমরান খান ও তার দলকে আরও শক্ত করবে। দুর্বল করে তুলবে নতুন সরকারকেও।
পাকিস্তানের সাবেক এ নারী মন্ত্রীকে গ্রেফতারে নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন আরও অনেকেই। বহু সাংবাদিক-কলামিস্ট, মানবাধিকার কর্মী অবিলম্বে শিরিন মাজহারিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রচার মাধ্যম জিও’র খবরে বলা হয়েছে, পাঞ্জাবের দুর্নীতি দমন বিভাগ কর্তৃক গ্রেফতার পিটিআই’র জ্যেষ্ঠ নেত্রী শিরিন মাজহারিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হামজা শরিফ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নারী হিসেবে শিরিন মাজহারি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কোনো নারীকে গ্রেফতার করা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে বেমানান। তদন্তের কারণে গ্রেফতার অনিবার্য হয়ে উঠলে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। দুর্নীতি দমন সংস্থার যে ব্যক্তি মাজহারিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ২১ মে, ২০২২
এমজে