যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ বিল পাস হয়েছে। সিনেটে পাসকৃত এ বিল গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র আইন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিলটি পাস করতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে যোগ দেন ১৫ জন রিপাবলিকান। বিলের পক্ষে ৬৫ ভোট, বিপক্ষে আসে ৩৩টি। সংখ্যগারিষ্ঠতা পাওয়ায় উচ্চকক্ষ বিলটিকে পাস হিসেবে ঘোষণা দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বন্দুক হামলা বেড়ে যায়। নিউইয়র্কের বাফেলো, টেক্সাসের উভালদেসহ বিভিন্ন রাজ্য ও রাজ্যশহরে বন্দুক হামলার ঘটনায় বহু হতাহত হন। বিষয়টি এমন গুরুতর অবস্থায় এসে দাঁড়ায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই নতুন করে বন্দুক আইনের ঘোষণা দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি নিয়ে ভোটাভুটি হয়।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণে বিলটি পাস হলেও বাকি রয়েছে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর। তার আগে প্রতিনিধি পরিষদে পাস করাতে হবে বিলটি। যা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যেতে পারে বলে সিএনএন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
নতুন এ বিলে ২১ বছরের কম বয়সী ক্রেতাদের ব্যাপারে পূর্বাপর অবস্থান যাচাই করতে বলা হয়েছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম ও স্কুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য ফেডারেল অর্থায়নে ব্যয় হবে ১৫ বিলিয়ন ডলার।
হুমকি হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বন্দুক নিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিলে। এ ক্ষেত্রে রাজ্যগুলোকে ‘লাল পতাকা’ আইন প্রয়োগে উত্সাহিত করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া অবিবাহিত কিন্তু কারও সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এটি মূলত তাদের জন্যই প্রয়োগ হবে যারা এর আগে বন্দুকের অপব্যবহারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
নতুন বিলটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে সিএনএন। কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের কাছে একই স্তরে সমর্থন পেয়েছে।
টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন কর্নিন নতুন বিলের ব্যাপারে বলেছেন, এটি আমেরিকানদের আরও নিরাপদ করবে।
ডেমোক্র্যাটিক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার বলেছেন, বন্দুক সহিংসতা আমাদের জাতিকে যেভাবে প্রভাবিত করে তার জন্য বিলটি নিরামক নয়। তবে, বিলটি সঠিক উপায় ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ।
গত কয়েকমাসে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা এতটাই বেড়েছিল যে, যারা বন্দুক বিক্রি বন্ধের বিরোধিতা করতেন তারাও দাঙ্গাহাঙ্গামা রোধে এ বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেন। বারবার বন্দুক হামলার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চলতি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার (২ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দেশে বন্দুক সহিংসতা রোধে আইন পাস করার আহ্বান জানান বাইডেন।
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্দুক হামলায় ১৮ শিশুসহ ২২ জন নিহতের ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর এ ঘোষণা দেন বাইডেন। এর আগেও অবশ্য কয়েকবার তিনি আইনের বিষয়ে কথা বলেছিলেন।
টেক্সাস ছাড়াও কলাম্বাইন, স্যান্ডি হুক, চার্লসটন, অরল্যান্ডো, লাস ভেগাস, পার্কল্যান্ড বন্দুক হামলায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বন্দুক হামলায় নিউইয়র্কে ১০ জন কৃষ্ণাঙ্গ, টেক্সাসের স্কুলে ২২ জন, ওকলাহোমায় একজন মারা গেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। এ ছাড়া পুলিশের গুলিতেও দেশটিতে নিহতের সংখ্যা অনেক। যদিও এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন কোনো ঘটনার হামলাকারী বা হামলার পরিকল্পনাকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ২৪ জুন, ২০২২
এমজে