ইরানে এক মাস আগে পুলিশি হেফাজতে তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভ থেকে দাঙ্গার ঘটনা ও এর মূলে যারা রয়েছেন তাদের কঠোর শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশটির বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই এ ঘোষণা দেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভ থেকে যারা দাঙ্গার ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেছে বিচার বিভাগ। প্রতিবেদনে বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেইকে উদ্ধৃত করা হয়।
এতে বলা হয়, ঘটে যাওয়া দাঙ্গার ঘটনায় যারা মূল উপাদানকারীদের কোনো প্রকার সহানুভূতি না দেখিয়ে কঠোর সাজা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই। তিনি বলেন, যারা অপেক্ষাকৃত কম দোষী, তাদেরও আলাদা করে বিচার করা হবে।
গত সপ্তাহে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ও পুলিশ বিষয়ক ডেপুটি মজিদ মিরাহমাদিও দাঙ্গার ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যাপারে জানান। তিনি বলেন, দাঙ্গার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই মুক্তি দেওয়া হবে না। দ্রুতই বিচার শুরু হবে। তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও প্রতিরোধমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
মাসা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভ থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ইরানের পুলিশ। বিক্ষোভের বিষয় যেন বিশ্ব মিডিয়ায় ছড়িয়ে না পড়ে, তাই ইরানে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অস্থিতিশীলতার নীতি’ অবলম্বনের অভিযোগ করেছেন।
রাইসির কার্যালয় জানিয়েছে, কাজাখস্তানে এক শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকীকরণ ও নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা ইরানে অস্থিতিশীল করার ব্যর্থ নীতি অবলম্বন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে হিজাবনীতি ভাঙার অভিযোগে ইরানের পুলিশ মাসাকে আটক করে। তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়। তার পরিবারের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় মামলাও করেছে। কিন্তু পুলিশ দাবি করে, হেফাজতে থাকলেও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাসার মৃত্যু হয়েছে। এরপর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
গত সপ্তাহে মাসার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইরানের ফরেনসিক মেডিকেল অর্নাইজেশন। এতে বলা হয়, আট বছর বয়সে মাসার মস্তিষ্কের টিউমার অপারেশন করা হয়েছিল। যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় বা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে কোনো আঘাত করেনি পুলিশ।
কিন্তু নিহতের পরিবার এ প্রতিবেদনে অস্বীকার করে। তাদের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। ফরেনসিক মেডিকেল অর্নাইজেশনের প্রতিবেদনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
মাসার মৃত্যু ২০১৯ সালের পর ইরানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের সূত্রপাত করে। বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন-পীড়ন চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তারা ১৫৪ জন নাগরিককে হত্যা করে বলে জানায় নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
এমজে