বগুড়া: বিপুল সম্ভাবনাময় পৌরসভা বগুড়ার শেরপুর। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।
পরিকল্পনার মাধ্যমে পৌরসভায় বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। রাতের শহরকে আলোর চাদরে মুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
আর এক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়া হবে না। সব মিলে এটি হবে দুর্নীতিমুক্ত একটি পৌরসভা। দুর্নীতির কাছ মাথা নত করা হবে না।
রোববার (৩ জানুয়ারি) বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার সদ্য নির্বাচিত মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন।
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুস সাত্তার। তার বাবার নাম মৃত তফের উদ্দিন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বর্তমানে তিনি ও তার দুই বোন জীবিত আছেন। শেরপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
১৯৭২ সালে সাত নম্বর সেক্টরের অধীনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আব্দুস সাত্তার।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান আমলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলাম আমি। ওই সময়ই দুই আনায় সদস্য ফরম কিনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হই। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্র ইউনিয়নের উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এই পদে থেকে শেরপুর কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিএস পদে নির্বাচিত হই। ১৯৭৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির শেরপুর উপজেলা কমিটির সদস্য ছিলাম। এরপর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। আষির দশকে ছিলাম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি। কমিউনিস্ট পার্টির মনোনয়ন পেয়ে ১৯৭৯ সালে শেরপুর-ধুনট আসনে এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হই। একই দলের হয়ে ১৯৮৯ সালে শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। কিন্তু ওই নির্বাচনেও পরাজয় বরণ করতে হয় আমাকে।
তিনি আরো বলেন, পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে উপজেলা ও জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। ২০১৩ সালে দলের শেরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেও এর দুই বছর আগে (২০১১ সাল) শেরপুর পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করে হেরে যাই।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করে জয় লাভ করেছি।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সদ্য নির্বাচিত মেয়র আব্দুস সাত্তার বাংলানিউজকে জানান, মানবসেবার উদ্দেশেই তিনি রাজনীতি করেন। এজন্য জনপ্রতিনিধি হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমি দলের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ বুঝি না। সবাই আমার। আমিও সবার। তাই আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করে আসছি। সবসময় দলের নেতাকর্মীরা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। ২০১১ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করে হেরে যাওয়ার পর ভেঙে না পড়ে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। দলের নেতাকর্মীরাও আমার সঙ্গে মাঠে থেকে সর্বোচ্চ কাজ করেছেন। যার ফলাফল হিসেবে জনগণ এবার আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করায় জয়লাভ অনেক সহজ হয়েছে। কারণ প্রতীকের কারণে ছোটখাটো সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে দলীয় নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে এই নির্বাচনে কাজ করেছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, সুষমভাবে সব এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কালভার্ট, লাইটিং ও ওয়াটার সাপ্লাইসহ বিভিন্ন কাজ করা হবে। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যদিও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বিষয়টা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করবো না।
বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে অর্থায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দেশের মানুষ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে সন্তুষ্ট। এছাড়া পৌরসভাটি বর্তমানে চৌদ্দ শহর প্রকল্পের অধীনে।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে এখানে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলছে। তাই বিকাশমান এই পৌরসভার উন্নয়নের অর্থায়নে কোনো সমস্যা হবে না বলে আশাবাদী তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৬
এমবিএইচ/এসআই