ধুনট (বগুড়া): নানা সমস্যা সংকটের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা অন্যতম। মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সামজিক আন্দোলন।
তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নসহ পৌরবাসীর শান্তির লক্ষ্যে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চান বগুড়ার ধুনট পৌরসভার পুনরায় নির্বাচিত মেয়র এজিএম বাদশাহ।
রোববার (০৩ জানুয়ারি) সকালে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি এবারও মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ধুনট পৌরসভা সম্প্রতি খ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন বাদশাহ। ওই নির্বাচনে নিজ দলের একাধিক বিদ্রোহীসহ ছয়জন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন তিনি। মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের পর জনকল্যাণে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে চার হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলিমুদ্দিন হারুন মণ্ডল পেয়েছেন দুই হাজার ৪৬৪ ভোট ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম খান পেয়েছেন এক হাজার ৫০৫ ভোট।
এজিএম বাদশাহ ধুনট পৌর এলাকার ভরনশাহী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান মণ্ডলের বড় ছেলে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আজিজুর রহমান। স্বাধীনতার পর ধুনট উপজেলায় প্রথম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।
বাবার কাছেই বাদশাহর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৭৮ সালে ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও ১৯৮৪ সালে ধুনট ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি।
এদিকে, ১৯৯৫ সালে ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৬ সালে ধুনট উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৭ সালে ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০০৪ সালে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ২০১২ সাল পর্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন এজিএম বাদশাহ।
২০১১ সালে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। তার বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন পৌরবাসীও। জনগণের সহযোগিতায় পৌর এলাকার চরধুনট, পূর্ব ভরনশাহী ও পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামে কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া পূর্বভরনশাহী প্রাথমিক বিদ্যালয়ও তার চেষ্টার ফল।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বঙ্গবন্ধু কন্যার সময়োচিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন মেয়র এজিএম বাদশাহ।
নির্বাচন পূর্ব পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি জানান, পবিত্র রমজান মাস থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ভোটারদের সঙ্গে বিভিন্ন কাজের মধ্যদিয়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
কর্মীর চেয়ে ভোটারদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। একজন ভোটার তার পক্ষে একজন কর্মী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে তার হয়ে কাজ করেছেন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, কোন এলাকায় কতো ভোট পেয়েছি, এটা বড় কথা নয়। পৌর এলাকায় উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের অধিকার বঞ্চিত অবহেলিত মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে চাই।
স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা সবসময় জনগণের পাশে থাকে। এ কারণে তাদের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা সংসদ সদস্যদের তুলনায় অনেক বেশি বলেও মনে করেন নতুন মেয়র।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তিনি জানান, জিঞ্জিরতলায় কবরস্থান, দাসপাড়ায় শ্মশান ঘাট ও ইছামতি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে স্লুইসগেট নির্মাণ করে পৌর এলাকার আবাদি জমি বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন।
আগামীতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে তিনি বলেন, নিজের ইচ্ছায় নির্বাচন করার আশা আমার নেই। তবে পৌরবাসী চাইলে আবারো নির্বাচন করবো।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় আমি কৃতজ্ঞ। এ জন্য সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
এসআই