ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

মংলা থেকে মবিনুল ইসলাম

ডিজিটাল পৌরসভার মডেল মংলা পোর্ট পৌরসভা

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
ডিজিটাল পৌরসভার মডেল মংলা পোর্ট পৌরসভা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মংলা (বাগেরহাট) থেকে: রাস্তায় ২৬টি সিসি ক্যামেরা, ৫৬টি সাউন্ড সিস্টেম (মাইক)। পৌরভবনের অফিস কক্ষগুলোও ক্যামেরার আওতায়।

মোড়ে মোড়ে ওয়াইফাই সংযোগ!

ডিজিটাল পৌরসভা গড়তে যা যা করণীয় তার প্রায় সবই করা হয়েছে বাগেরহাটের মংলা পোর্ট পৌরসভায়। পৌরবাসীর শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে অবিরাম উন্নয়ন কাজ করে চলেছেন এ পৌরসভার মেয়র মো. জুলফিকার আলী।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকালে মংলা পোর্ট পৌরসভার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

জুলফিকার আলী বলেন, মংলা পোর্ট পৌরসভাকে উন্নয়নের দিক থেকে দেশের সেরা পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য যা করা দরকার সবই করে যাচ্ছি।

বেড়েছে রাজস্ব আদায়
২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মংলা পোর্ট পৌরসভার দায়িত্ব নেন মো. জুলফিকার আলী। সেই সময় বিভিন্ন খাতে ১০ কোটি টাকা দেনা ছিল এ পৌরসভার। স্টাফদের বেতন বকেয়া ছিল ১১ মাস। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ লাখ। এখন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৩০ লাখ। রাজস্ব আদায় হয় ৮৮ শতাংশ। পানির বিল ৯৫ শতাংশ। আগে এ পৌরসভার আয় ছিল ৭০ লাখ, এখন তা সাড়ে ৪ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। নিয়মিত বেতন দেওয়া হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

রাস্তাঘাটের উন্নয়ন
বছরের ৬ মাস জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকতো পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, চারদিকে ছিল নোংরা-আর্বজর্নার স্তূপ, বিশুদ্ধ পানির সংকট ছিল প্রকট। এখন আর সে অবস্থা নেই। সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাস্তাঘাটসহ পৌর এলাকার বাজারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় না পৌরবাসীর।

ডিজিটাল পৌরসভা
পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণকে ঠিক মতো সেবা দিচ্ছে কিনা, সেটি তদারকি করতে পৌরভবনের প্রত্যেকটি রুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন মেয়র। সাচ্ছন্দ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পৌরবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ডের ৫৬টি স্থানে বসানো হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম (মাইক)। বিদ্যুতের পাশাপাশি সোলার লাইট দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।

যেকারণে ৫৬ মাইক
পৌর এলাকার কেউ মারা গেলে তার জানাজার খবর; কোথায়, কখন, কয়টা পর্যন্ত কর আদায় করা হবে; কার হোল্ডিং চার্জ ও পানির বিল বকেয়া; কোথাও আগুন লাগলে; প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলে; কারো কিছু হারালে; ঈদের জামাত কোথায়, কখন ইত্যাদি পৌরসভার মাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

অপরাধ প্রবণতা কমেছে
রাস্তার মোড়ে মোড়ে সি সি ক্যামেরা স্থাপনের কারণে অপরাধ প্রবণতা নেই বললেই চলে। অপরাধীরা ভয়ে পৌর এলাকা এড়িয়ে চলে। কিন্তু আগে প্রায় প্রতিদিনই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত হতো এখানে।

১০ হাজার গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা
মংলা পোর্ট পৌরসভাকে গ্রিন জোন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন পৌর মেয়র। ইতোমধ্যে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ১০ হাজার গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মাইক স্থাপনের সুফল
সম্প্রতি বগুড়া থেকে মংলায় এসে এক যুবকের টাকা হারিয়ে যায়। এ বিষয়টি তিনি পৌরসভায় জানান। এরপর তা মাইকে ঘোষণা দিলে এক ঘণ্টার মধ্যে এক ব্যক্তি এসে তার টাকা দিয়ে যান।

এক নারী তার ভ্যানিটি ব্যাগ হারিয়ে ছিল। তার মধ্যে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছিল। পৌরসভায় বিষয়টি জানানো পর তা মাইকে প্রচার করা হয়। এরপর তিনি তার ভ্যানিটি ব্যাগ পান।

মেয়র জুলফিকার আলী বাংলানিউজকে আরও বলেন, এ পৌরসভায় আরও খাল-নদী খনন,  মেরিন ড্রাইভ রোড তৈরি করা হবে। বর্তমানে এ পৌরসভার আয়তন ২০.৪৩ বর্গ কিমি। এটি আরও ১০ বর্গ কিমি. বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
পিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।