ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সফর অবস্থায় রোজা পালনের বিধি-বিধান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
সফর অবস্থায় রোজা পালনের বিধি-বিধান

রোজা বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির মধ্যে তৃতীয়। সুবহে সাদেক বা ভোরের সূক্ষ আলো থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার এবং যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা।

একজন মুমিনের জন্য রমজান মাসের প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ।

রোজা প্রত্যেক সক্ষম মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ করেছেন আল্লাহ। তবে এ থেকে সাময়িকভাবে হলেও ছাড় দেওয়া হয়েছে রোগী ও মুসাফিরকে। অসুস্থতা যেমন সিয়াম পালন থেকে ছাড় পাওয়ার একটি কারণ তেমনি আরেক কারণ সফর।

সফর অবস্থায় রোজা সংক্রান্ত বিধি-বিধান:

সফরকালে রোজা রাখতে সক্ষম-অক্ষম সবার জন্যই রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।

আল্লাহ তাআলা সফরে রোজা প্রসঙ্গে বলেন,

    فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

    “অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা সফরে থাকবে সে অন্য সময় পূরণ করে নেবে। ” (সূরা বাকারা: ১৮৪)

সফর কষ্টদায়ক হোক বা আরামদায়ক হোক তাতে হুকুমের পরিবর্তন হবে না। মুসাফির ব্যক্তি যদি খাদেম সাথে নিয়ে ছায়ায় থাকে, পানি পথে বা আকাশ পথে সফর করে তার জন্যও রোজা ভঙ্গ করা এবং নামাজ কসর করা জায়েজ। যেহেতু পূর্বোল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিয়েছেন।

ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

    إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى مَعْصِيَتُهُ

    “আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর অবকাশ দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন। যেমন তিনি তাঁর অবাধ্যতাকে অপছন্দ করেন। ” [মুসনাদে আহমদ হা/৫৮৬৬]

হামযাহ্ ইবনে আমর আল আসলামি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সফর অবস্থায় সিয়াম পালনের ক্ষমতা আমার রয়েছে। এ সময় সিয়াম পালন করলে আমার কোনো গুনাহ হবে কি?

তিনি বললেন,

    هِىَ رُخْصَةٌ مِنَ اللَّهِ فَمَنْ أَخَذَ بِهَا فَحَسَنٌ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ

    “এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিশেষ অবকাশ, যে তা গ্রহণ করবে, তা তার জন্য উত্তম। আর যদি কেউ সিয়াম পালন করতে চায়, তবে তার কোনো গুনাহ হবে না। ” [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫১৯]

আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সফরে প্রচণ্ড গরমের দিনে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যাত্রা করলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই আপন আপন হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) ব্যতীত আমাদের কেউই সিয়াম রত ছিলেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯৪৫)

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে?

তারা বলল, সে রোজাদার। আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,

    لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصِّياَمُ في السَّفَرِ

    “সফরে সওম পালনে কোনো নেকির কাজ নয়। ’’ [বুখারি, হাদিস নং ১৯৪৬]

– জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের বছর মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং সওম পালন করেই কুরাউল গামীম নামক উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছলেন। সাহাবীগণও সওম পালন করতে লাগলেন।

তখন রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সংবাদ পৌঁছল যে, সাহাবীদের জন্য সওম পালন করা কষ্ট দায়ক হয়ে পড়েছে। তখন তিনি আসরের পরে এক পেয়ালা পানি চাইলেন এবং তা পান করে ফেললেন। আর সাহাবীগণ (এ দৃশ্য) দেখছিলেন।

এরপর কিছু সাহাবি রোজা ভঙ্গ করে ফেললেন আর কিছু সাহাবি রোজা অব্যাহত রাখলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু সাহাবির রোজা পালনের ব্যাপারের খবর পৌছলে তিনি বললেন যে, أُولَئِكَ الْعُصَاةُ أُولَئِكَ الْعُصَاةُ “এরাই অবাধ্য, এরাই অবাধ্য। ” [মুসলিম হা/২৬৬৬, নাসায়ী, হাদিস নং ২২৬৩]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।