ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মহানবী (সা.) নারীদের সঙ্গে যেমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
মহানবী (সা.) নারীদের সঙ্গে যেমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন

নারী হলো মায়া, স্নেহ ও ভালোবাসার আধার। ছোটবেলায় কন্যা হিসেবে পিতার কাছে, বোন হিসেবে ভাইয়ের কাছে, স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছে।

অতঃপর মা হিসেবে সন্তানের কাছে মমতার অধিকারী ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তা ছাড়া নারীরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অংশীদার।

স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব ও ঘরের রক্ষক। উপস্থিতিতে প্রয়োজনমাফিক সেবিকা, সন্তানের দেখাশোনা এবং রান্নাবান্নায় সবচেয়ে মমতাময়ী ও দায়িত্বশীল গৃহকর্ত্রী। তাই নারীর সঙ্গে সর্বদা কোমল আচরণ করা একজন পুরুষের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) চমৎকার একটি উপমা পেশ করেছেন।

আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী (সা.) তাঁর কতক স্ত্রীর কাছে এলেন। তখন তাঁদের সঙ্গে উম্মু সুলাইমও ছিলেন। নবী (সা.) বলেন, সর্বনাশ, হে আনজাশাহ, তুমি (উট) ধীরে চালাও। কেননা তুমি কাচপাত্র (মহিলা) নিয়ে চলেছ।

বর্ণনাকারী আবু কিলাবা বলেন, নবী (সা.) ‘সাওকাকা বিল কাওয়ারির’ বাক্য দ্বারা এমন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করলেন, যা অন্য কেউ বললে তোমরা তাকে ঠাট্টা করতে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৪৯)

উল্লিখিত হাদিসে নারীদের কাচপাত্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যদি তিনি এই উপমা না দিয়ে শুধু এ কথা বলতেন যে ‘নারীদের নিয়ে ধীরে চলো’, তাহলে নারীদের প্রতি সদাচরণের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পেত না। এই উপমার কারণ হলো, কাচের জিনিস ভঙ্গুর হয়। এ জন্য তা যত্ন করে রাখতে হয়।

তবে তা ঘরের শোভাবর্ধন করে, মানুষের মনের প্রশান্তির মাধ্যম হয়। তেমনি নারীদের শরীর ও মন কোমল হয়। অল্প আঘাতেই ভেঙে যায়। সামান্য কথায় চোখ থেকে অশ্রু ঝরে, তারা ভালোবাসা ও যত্নের ওপর টিকে থাকে।

তাই নবী (সা.) নারীদের কাচপাত্রের সঙ্গে তুলনা দিয়ে এ কথা বুঝিয়েছেন যে কাচপাত্রের মতো তাদেরও যত্ন করে রাখতে হবে। কারণ এই উভয়টিই সামান্য আঘাতে ভেঙে যায়। এ জন্য তিনি নারীদের সঙ্গে উত্তম আচরণের উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম নাসিহা প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের নাসিহা করতে থাকো। (বুখারি, হাদিস :৩৩৩১)

এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো। অতঃপর যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

তা ছাড়া পুরুষের চরিত্রের প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ পায় নারীর সঙ্গে কৃত আচরণের মাধ্যমে। ভালোবাসা ও মমতার মাধ্যমে নারীর মনে নিজের জন্য আসন করে নেওয়াকে নবী করিম (সা.) একজন ভালো মানুষ হওয়ার মানদণ্ড বানিয়েছেন। যেমনটি হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মাঝে সেই ভালো যে তার পরিবারের কাছে ভালো আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের চেয়ে উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৫)

আর নারীর প্রতি নির্মমতা ও কঠোরতা প্রদর্শন, তাদের গায়ে হাত তোলা মানুষের ব্যক্তিত্বকে কলঙ্কিত করে। এটা কোনো ভালো মানুষের কাজ হতে পারে না । রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুহাম্মদের পরিবারের কাছে অনেক নারী তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। সুতরাং যারা স্ত্রীদের প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৬)

এর মূল কারণ হলো, আল্লাহ তাআলা নর-নারীকে পরস্পরের সহযোগী ও পরীক্ষার মাধ্যম বানিয়েছেন। উভয়ের মাঝে যেমন মিল-মুহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন তেমনি মন-মেজাজ ও পছন্দ-অপছন্দের কিছু ভিন্নতাও দিয়েছেন। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, পরস্পরে ভালোবাসা ও সমঝোতার মাধ্যমে দোষত্রুটি সংশোধন করা, নিজেদের বন্ধন আরো উন্নত করতে সম্পর্কের যত্ন নেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।