ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

নীরবে আমল নষ্ট করে যেসব কাজ 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৪
নীরবে আমল নষ্ট করে যেসব কাজ 

নেক আমল পরকালীন জীবনের মূলধন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বড় মাধ্যম।

তাই আখিরাতে শান্তি ও সফলতা লাভে বান্দার কবুলযোগ্য আমলের বিকল্প নেই। কিন্তু জীবন চলার পথে নিজের ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় এমন কিছু বদ আমল সংঘটিত হয়, যা খাঁটি ও কবুল হওয়া আমলগুলো নষ্ট করে দেয়।
এখানে আমল বিনষ্টকারী সেই বদ আমলগুলো তুলে ধরা হলো: 

রিয়া বা লৌকিকতা 
মানুষের নিয়তনির্ভর আমলের ওপর আখিরাতের প্রতিদান নির্ধারিত হয়। তাই আমল হতে হবে একনিষ্ঠভাবে। লৌকিকতা পূর্ণ আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, শিরকে আসগর কী? তিনি বলেন, রিয়া (লোক-দেখানো আমল), আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদের (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেওয়া হবে তোমরা তাদের কাছে যাও যাদের তোমরা দুনিয়ায় দেখাতে, দেখো তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাও কি না। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৬৩৬) 

গোপনে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া 
আল্লাহ তাআলা যেসব কাজ হারাম করেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য। পাহাড়সম আমল করার পর কেউ যদি একান্ত গোপনে হারাম কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের একদল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃ গোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতো ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৪৫) 

জাদুকর ও গণকে বিশ্বাস করা 
ভবিষ্যৎ বিষয় জানার জন্য জাদুকর বা গণকদের বিশ্বাস করা এবং তাদের কাছে আসা-যাওয়া করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এর দ্বারা বান্দার আমল বিনষ্ট হয়। নবীজি (সা.) এর ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি গণকের কাছে গেল এবং তাকে কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন করল, ৪০ রাত তার কোনো নামাজ কবুল হবে না।  
(মুসলিম, হাদিস: ৫৭১৪) 

শখ করে কুকুর পোষা 
ঘরে বা অফিসে শখ করে কুকুর পোষা, মানুষের চেয়ে কুকুরের যত্ন বেশি নেওয়া, এমনকি কুকুরের সঙ্গে মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এর মাধ্যমেও নিজেদের কৃত আমল নষ্ট হয়। সাহাবি ইবনে ওমর (রা,) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু পাহারা অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর লালনপালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৮৭) 

আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা 
আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা মারাত্মক গুনাহ। এই মিথ্যা শপথে বান্দার আমল বিনষ্ট হয় এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি তার ওপর বর্ষিত হয়। জুনদাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুক লোককে মাফ করবেন না। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, ওই ব্যক্তি কে? যে শপথ খেয়ে বলে যে আমি অমুককে মাফ করব না? আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার শপথ নষ্ট করে দিলাম। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭৫) 

বিদআতের প্রচার-প্রসার করা 
ইসলাম ধর্মে নতুন কিছু প্রবর্তন করা নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি তা করবে, এর দায় তাকেই বহন করতে হবে। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বিনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৯৭) 
উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে কোনো আমল ও ইবাদত দুটি শর্ত ছাড়া কবুল হয় না— 

মুরতাদ বা ঈমান ত্যাগকারী হওয়া 
আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আনার পর তাঁকে অস্বীকার করা এবং কুফরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখাকে মুরতাদ বা ঈমান ত্যাগকারী বলা হয়। শরিয়তে ঈমান ত্যাগকারীর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অনেক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। পার্থিব শাস্তির একটি দিক হলো যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাওয়া।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।