ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

প্রতারণা ও পাপাচার থেকে সুরক্ষায় যা করণীয়

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
প্রতারণা ও পাপাচার থেকে সুরক্ষায় যা করণীয়

অনলাইনে অপরাধীদের নতুন ফাঁদ ‘সেক্সটরশন’ ফিতনা। ‘সেক্সটরশন’ হলো, কৌশলে কারও একান্ত গোপন ছবি কিংবা বিব্রতকর তথ্য হাতিয়ে তাকে জিম্মি করা এবং তাকে এগুলো ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর কাজ করতে বাধ্য করা।

অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা এই পদ্ধতিতে ভিকটিম থেকে নগদ অর্থ আদায় করে। এ ধরনের ফাঁদে সাধারণত উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের টার্গেট করা হয়।

এফবিআইয়ের তথ্যমতে, ‘সেক্সটরশন’ যেকোনো ওয়েব সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অ্যাপ্লিকেশন অথবা গেম থেকে শুরু হতে পারে, যেখানে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পায়। প্রথমত অপরাধীরা টার্গেট ব্যক্তির সমবয়সী বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে, ফেক আইডি করে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে, একসময় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে একান্ত গোপন ছবি বা তথ্য হাতিয়ে নেয়। তারপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। তাদের দাবি পূরণ না করলে ইজ্জত নিলামে তোলার হুমকি।

ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে অন্যের সম্মান হানি করা বা তাতে সহযোগিতা করা হারাম। ইসলাম কারো সম্মান হানি করার অধিকার কাউকে দেয়নি।   রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের (পরস্পরের) জান, মাল ও ইজ্জতকে হারাম করেছেন, যেমন হারাম তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৩)

‘সেক্সটরশন’-এর ফাঁদে পড়ে ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো যখন অনলাইনে চলে আসে, তখন অনেকে আবার এগুলো নিজেরা যেমন দেখে তেমনি শেয়ার করে অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়, যা মূলত অশ্লীলতা প্রসারের শামিল।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

ইসলামের দৃষ্টিতে অনলাইনভিত্তিক কিছু অপরাধ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো—

অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করা : প্রথমত এটি অত্যন্ত জঘন্য পর্যায়ের একটি প্রতারণা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)

অন্যের সম্মানহানি করা : অন্যের সম্মান হানি করার জন্য ফাঁদ পাতা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। যারা তা করবে, মহান আল্লাহ তাদের অপদস্থ করে ছাড়বেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু বারজাহ আল-আসলামি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে সেসব লোক, যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি ! তোমরা মুসলিমদের গিবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস  : ৪৮৮০)

অন্যায়ভাবে অর্থ আদায় : অর্থ উপার্জনের জন্য এ ধরনের অন্যায় পথ অবলম্বন করা হারাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করবে না, তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। তোমরা একে অন্যকে হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে এমন কাজ করলে তাকে অগ্নিদগ্ধ করব, তা আল্লাহর পক্ষে সহজ। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩০)

সবচেয়ে বিপদের কথা হলো, এই ফাঁস হওয়া ছবি বা ভিডিও দেখে যত মানুূষ গুনাহে লিপ্ত হবে, শেয়ারকারী তাদের সবাই সমপরিমাণ গুনাহের ভাগ পাবে।   হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৯)

মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের পাপ ও ফাঁদ থেকে হেফাজত করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।