ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

হিজরতের পর যার ঘরে মেহমান হয়েছেন মহানবী (সা.)

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
হিজরতের পর যার ঘরে মেহমান হয়েছেন মহানবী (সা.)

হিজরতের সময় ইয়াসরিবের (বর্তমান মদিনার) মুসলমানরা শুনতে পান, শেষ নবী মক্কা থেকে তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ইয়াসরিবে (মদিনা) হিজরত করবেন। এই বার্তায় গোটা ইয়াসরিবে আনন্দের বন্যা ছড়িয়ে পড়ে।



আল্লাহর বন্ধু শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করতে শুরু হয় নানা প্রস্তুতি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নবীজি (সা.)-এর আগমন ঘটে।

তাঁরা রাসুল (সা.)-কে পরম ভালোবাসা ও আগ্রহের সঙ্গে বরণ করে নেন।
প্রত্যেকে মনে মনে আকাঙ্ক্ষা করছিল যে নবীজি (সা.) যেন তার ঘরে মেহমান হোন। কিন্তু নবীজি (সা.) বলেন, আমার বাহন আদিষ্ট। যার ঘরের সামনে সে বসবে, সেখানেই আমার অবাসস্থল হবে। রাসুল (সা.)-এর বাহন হাঁটছে। এরপর সবাই তার বাহনের পেছনে ছুটছে। আশা-ভালোবাসার অস্থির চোখে সবাই দেখার অপেক্ষায়, সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিটি কে, যার ঘরের সামনে বাহন বসবে এবং নবীজি তার মেহমান হবেন?  অবশেষে রাসুল (সা.)-এর বাহনটি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘরের সামনে থামল। রাসুল (সা.) তার ঘরের অতিথি হলেন।
মহানবী (সা.)-এর সেবা-যত্নে আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। রাসুলের থাকা-খাওয়া, চলা-ফেরায় যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সে দিকে সতর্ক ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি মেহমানদারির সর্বোত্কৃষ্ট উপমা স্থাপন করেন। আবু আইয়ুব আনসারির ঘরের ওপর একটি চিলেকোঠা ছিল। তিনি ভাবলেন, রাসুল (সা.) সম্মানিত। আমাদের মাথার তাজ। তিনি আমাদের ওপরে (উপর তালায়)—থাকবেন এটাই ভালো হবে। রাসুল (সা.)-কে ওপরে থাকার প্রস্তাব করলে তিনি তা পছন্দ করলেন না; বরং নিচেই থাকতে চাইলেন। কারণ তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে সব সময় মানুষ আসতে থাকবে। আর ওপরে থাকলে সবার জন্য তা কষ্টকর হবে। অবশেষে আবু আইয়ুব ও তাঁর স্ত্রী ওপরে থাকা শুরু করেন। আর রাসুল (সা.) নিচেই অবস্থান করেন। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর সেবায় তাঁর ত্রুটি ছিল না। মহানবীর প্রতি তার হৃদয়ে ছিল অগাধ ভালোবাসা।

প্রসিদ্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। একবার রাসুল (সা.), আবুবকর ছিদ্দিক (রা.) ও ওমর (রা). রোদ্রমুখর দুপুরে প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে বের হন। এরপর সবাই আবু আইয়ুব আনসারির বাড়িতে যান। আবু আইয়ুব (রা.) তখন পাশেই এক খেজুর বাগানে কাজ করছিলেন। রাসুল (সা.)-এর আওয়াজ শুনেই দৌঁড়ে আসেন। অসময়ে মেহমান নিয়ে রাসুল (সা.)-এর আগমনে তিনি খানিকটা বিস্মিত হন। দ্রুত তিনি খেজুর বাগানে গিয়ে একটি খেজুরের কাঁদি কেটে আনেন। কাঁদিতে কাঁচা, পাকা, আধা-পাকা সব ধরনের খেজুরে ভরপুর ছিল। রাসুল (সা.) এ ধরনের কাঁদি আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাই আপনি আপনার পছন্দের খেজুর গ্রহণ করুন। আমি জানি না, এই মুহূর্তে আপনার কোন ধরনের খেজুর বেশি পছন্দ। তাই সব ধরনের খেজুরের একটি কাঁদি কেটে এনেছি। এরপর তিনি একটা ছাগলছানা জবাই করলেন। স্ত্রীকে বলেন ভালো করে রুটি বানাতে। ছাগলের অর্ধেক রসালো করে রান্না করা হয়। বাকি অর্ধেক দিয়ে কাবাব তৈরি করা হয়। এখানেও তিনি রাসুল (সা.)-এর পছন্দকে প্রাধান্য দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫১৯৩)
(সুওয়ারুম মিন হায়তিস সাহাবাহ অলম্বনে)

লেখক: আবুবকর ছিদ্দীক ইসরাফীল 

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।