ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে ভালোবাসার রূপরেখা

ইসলাম ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
ইসলামে ভালোবাসার রূপরেখা

দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। তিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন বলেই পৃথিবী এত সুন্দর।

মা তার সন্তানের জন্য রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়, বাবা তার শরীরের রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পরিশ্রম করে যায়। মানুষ তার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুর জন্য কখনো জীবন বাজি রেখে দেয়।

মজার বিষয় হলো, যে ভালোবাসাকে আমরা চূড়ান্ত ভালোবাসা ভাবছি, আল্লাহর ভালোবাসার কাছে তা কিছুই নয়, প্রকৃত ভালোবাসা তো আল্লাহর কাছে। প্রকৃত দয়া তো তাঁরই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে ৯৯ ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন।

আর পৃথিবীতে এক ভাগ পাঠিয়েছেন। ওই এক ভাগ পাওয়ার কারণেই সৃষ্টজগৎ পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার ওপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে সে ব্যথা পাবে। (বুখারি, হাদিস : ৬০০০)

নিম্নে এমন কিছু ভালোবাসার সম্পর্ক তুলে ধরা হলো, যেগুলো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কর্তৃক অনুমোদিত—

আল্লাহ তাঁর রাসুলের জন্য ভালোবাসা: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।

আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এর মধ্যে তিনটি গুণ থাকে সে ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা পেয়ে যায়; (১) যার কাছে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল অন্য সবকিছু অপেক্ষা বেশি প্রিয়; (২) যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা রাখে এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করে; (৩) আর যদি ভয়াবহ আগুন প্রজ্বলিত করা হয়, তবে তাতে প্রবেশ করা তার কাছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা অপেক্ষা বেশি পছন্দনীয় হয়। ’ (নাসায়ি, হাদিস; ৪৯৮৭)

মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা: মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বোলো। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)

স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা: এটি গুনাহ ও ফিতনা থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম। প্রতিটি মানুষেরই পৃথিবীতে অন্তত একজন একান্ত ভালোবাসার মানুষের প্রয়োজন হয়, যে একান্ত তারই হবে, সুখে-দুঃখে তার সঙ্গ দেবে। এর চোখে তাকিয়ে হতাশা ও কষ্ট ভুলবে। তার উপস্থিতি তাকে প্রশান্তি দেবে। মানুষের এই চাহিদা মেটাতে মহান আল্লাহ এক পবিত্র সম্পর্কের সৃষ্টি করেছেন, তা হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা রুম, আয়াত : ২১)

এজন্যই হয়তো রাসুল (সা.) বলেছেন, দুজনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৪৭)

সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভালোবাসা: পবিত্র কোরআনে সন্তানকে দুনিয়ার শোভা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সুরা কাহফে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের কাছে প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম। ’  (সুরা ফাহফ, আয়াত : ৪৬)

নবীজি (সা.)-তার সন্তানকে যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি তার নাতিদেরও ভালোবাসতেন। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমার কোনো প্রয়োজনে নবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। নবী (সা.) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল, যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার প্রয়োজন সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কী? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেল তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রা.)। তিনি বলেন, ‘এরা দুজন আমার পৌত্র (দৌহিত্র) এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ, আমি এদের দুজনকে ভালোবাসি। সুতরাং তুমি তাদের ভালোবাসো এবং যে ব্যক্তি এদের ভালোবাসবে, তুমি তাদেরও ভালোবাসো। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬৯)

আত্মীয়দের জন্য ভালোবাসা: আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা তাদের সঙ্গে সদাচরণ শুধু রিজিকের দরজাই খোলে না বরং জান্নাতের দরজাও খোলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোকসকল, তোমরা সালাম দানের প্রসারতা বাড়াও, আত্মীয়তার বন্ধনকে দৃঢ় করো, খাদ্য দান করো, লোকের প্রগাঢ় ঘুমের সময় রাতে তাহাজ্জুদ সলাত পড়ো, ফলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১৫৩১)

মুমিনদের জন্য ভালোবাসা: মুমিনদের পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসা স্থাপন করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া নেই। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪২)

যে ভালোবাসা আফসোসের কারণ হবে: উপরোক্ত ভালোবাসাগুলো তখনই নিরাপদ, যখন তা আল্লাহর আইনানুযায়ী হবে। সন্তান বা পরিবারের প্রেমে অন্ধ হয়ে গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আল্লাহর নাফরমানির সঙ্গে আপস করার সুযোগ নেই। যদি করা হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, বলে দাও, ‘তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা, যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা করো আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত। ’ আর আল্লাহ ফাসিক সমপ্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সুরা তাওবা, আয়াত : ২৪)

আর আল্লাহ যেসব ভালোবাসা হারাম করেছেন, বা যাদের সঙ্গে ভালোবাসার বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক করতে নিষেধ করেছেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন তো ভয়ংকর অপরাধ।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন,  ‘আর সেদিন জালিম নিজের দুই হাত কামড়িয়ে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে কোনো পথ অবলম্বন করতাম! হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক। ’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ২৭-২৯)

মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।