ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

যাদের দোয়া কবুল হয় না

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৪
যাদের দোয়া কবুল হয় না

আমরা অনেকেই মহান আল্লাহর কাছে চাওয়ার এবং তাঁকে ডাকার বা তাঁর কাছে দোয়া করার যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলেছি! অথচ মহান আল্লাহর নির্দেশ—‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই।

’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৬)

দোয়ার সংজ্ঞা ও প্রকার

দোয়া অর্থ নিরূপায়ভাবে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে নিবেদন করা এবং তাঁর কাছে সাহায্য ও মঙ্গল কামনা করা। পারিভাষিক অর্থে দোয়া দুই প্রকার।
‘দোয়া-ই ইবাদাহ’ অর্থাৎ সব ইবাদতই এক ধরনের দোয়া এবং ‘দোয়া-ই মাসআলা’ অর্থাৎ কোনো কিছু মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

দোয়ার গুরুত্ব

পবিত্র হাদিসে দোয়াকে ‘মুখ্খুল ইবাদত’ বা ইবাদতের মগজ বলা হয়েছে। (তিরমিজি)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যার জন্য দোয়ার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। ’ (তিরমিজি)

দোয়ার বরকতে মানুষের জীবনের গতিপথ বদলে যায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘দোয়া ছাড়া কোনো কিছু ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক আমল ছাড়া হায়াত বৃদ্ধি পায় না। ’ (তিরমিজি)

যাদের দোয়া কবুল হয়

প্রিয় নবী (সা.)-এর বাণীতে কতিপয় ব্যক্তিত্বের দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ পাওয়া যায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের দোয়া কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী : ক. পিতা-মাতার দোয়া, খ. মুসাফিরের দোয়া এবং গ. মজলুমের দোয়া। (আবু দাউদ)

এ ছাড়া অসুস্থজনের দোয়া কবুল হয়। অসুস্থজনকে ক্ষমা করা হয় ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। হাদিসে আছে, ‘কোনো অসুস্থ ব্যক্তির কাছে গেলে তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া। কেননা অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া ফেরেশতাদের দোয়া বা মিনতি করার মতো। ’ (ইবনে মাজাহ)

অন্যদিকে অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দোয়া করলে ওই দোয়া কবুল হয়, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি তার কোনো ভাইয়ের জন্য তার পেছনে (অনুপস্থিতিতে) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তবে ফেরেশতা ওই দোয়া কবুলের জন্য ‘আমিন’ বলেন। (কান্নাকাটি করে দোয়া করলে) নিজের জন্যও এ দোয়া কবুল হয়।
’ (মুসলিম)

কবুল হয় না যাদের দোয়া

যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না, তা হলো—ক. পানাহার ও পোশাক হালাল না হওয়া, খ. দোয়ায় ইখলাস ও নিষ্ঠাহীনতা, গ. রক্তের বন্ধন ছিন্নকারীর দোয়া, ঘ. গুনাহ করা ও গুনাহে অবিচল থাকা, ঙ. দোয়ায় অমনোযোগী হওয়া, চ. দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া, ছ. সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ না করা ইত্যাদি।

এ ছাড়া ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) বলেন, ১০ বিষয়ে তোমাদের অন্তর মরে গেছে, সুতরাং তোমাদের দোয়া কিভাবে কবুল হবে?... (‘আল আদাবুল জাদিদ’, তাজকেরাতুল আওলিয়া ও অন্যান্য)

দোয়ার প্রামাণ্যতা ও শক্তি

পবিত্র কোরআনে রয়েছে নবী-রাসুলদের অসংখ্য মাকবুল দোয়ার ভাষা ও বর্ণনা। পবিত্র হাদিসেও আছে প্রিয় নবী (সা.)-এর শেখানো ভাষায় মাকবুল দোয়ার বর্ণনা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শেখানো ভাষায় দোয়ার তাৎপর্য রয়েছে, এসব দোয়া কবুলের সম্ভাবনাও নিশ্চিত। বুজুর্গদের বহুল চর্চিত-পরীক্ষিত আমল থেকে ‘দোয়ার শক্তি’ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

মহান আল্লাহর ইচ্ছা

অনেকে বলেন দোয়ায় কী হয়, কী পেলাম? অনেকেই দোয়ার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে, দোয়ার স্থান-কাল নিয়ে বিতর্কে জড়ান! তবে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর ইচ্ছারও তাৎপর্য আছে, তিনিই বলেন, ‘তোমরা ইচ্ছা করলেই কিছু চাইতে পারো না যদি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ইচ্ছা না করেন। ’ (সুরা : তাকভির, আয়াত : ২৯)

কাজেই দোয়ার পদ্ধতি ও আদব জেনে নেওয়া ধর্মের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। মহান আল্লাহ সবার দোয়া কবুল করুন। আমিন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।