ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

আল্লাহতায়ালাই সব সংকট ও বিপদ দূরকারী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
আল্লাহতায়ালাই সব সংকট ও বিপদ দূরকারী

রাতের আগমন, দিনের পরিবর্তন মানুষের অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। দুঃখ, কষ্ট, বিপদ ও সংকট মানুষের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে।

শুধু তাই নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মানুষের শরীরে, তার পরিবারে, তার সম্পদে এমনকি তার দেশেও পরিলক্ষিত হয়।  

এমতাবস্থায় মানুষের স্মরণ করা প্রয়োজন তার মহান রবের ঘোষণা।

যে ঘোষণায় তিনি বলেছেন, ‘তিনি যদি তোমাকে বিপদ দিতে চান, তিনি ছাড়া এ বিপদ থেকে বাঁচানোর কেউ নেই। তিনি যদি তোমাকে কল্যাণ দিতে চান, এ কল্যাণ ঠেকানোর কেউ নেই। তিনি সব বিষয়ে ক্ষমতাশালী। ’
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, তোমাদেরকে জল ও স্থলের অন্ধকার থেকে কে রক্ষা করেন তোমরা তাকে ডাকো বিনয়ের সঙ্গে ও গোপনে। তোমরা বলো, তিনি যদি আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করেন তাহলে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবো। ’

একজন মুসলিম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, আল্লাহতায়ালাই সব সংকট থেকে রক্ষাকারী। সব বিপদ ও কষ্ট দূরকারী। এ বিশ্বাস নিয়ে সে তার কাছে দোয়া করে নিষ্ঠা ও বিনয়ের সঙ্গে। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। ’

সুতরাং কষ্ট ও বিপদের সময় একদিকে যেমন দোয়া করতে হবে; অন্যদিকে আশা পোষণ করতে হবে, আল্লাহ সংকট থেকে প্রশস্ততার দিকে নিয়ে যাবেন, দুশ্চিন্তামুক্ত করবেন। দোয়াতে ওইসব বিষয়কে উসিলা তথা মাধ্যম বানানো যাবে যাকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মাধ্যম বানিয়েছেন।  

ইমাম তিরমিজি (রহ.) সাহাবি হজরত আনাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সংকটকালীন সময়ে বলতেন, ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ। ’ অর্থাৎ ‘হে চিরঞ্জীব, হে নিজ থেকে প্রতিষ্ঠিত! আমি তোমার করুণা ও দয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাই। ’

বিপদ ও সংকট থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটি দোয়া হলো- হজরত ইউনূস (আ.) মাছের পেটে থেকে যে দোয়াটি করেছেন। তা হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। ’ অর্থাৎ ‘তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র। আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। ’

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম এটি পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, আল্লাহ তাতে সাড়া দেবেন। ’ -মুসতাদরাকে হাকেম

এটি মূলত আল্লাহর ঘোষণা। তিনি বলেন, ‘আমি তার (ইউনূসের) ডাকে সাড়া দিয়ে, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছি, অনুরূপ মুমিনদেরকে আমি মুক্তি দেবো। ’

সংকট থেকে মুক্তি, কঠিন অবস্থা দূর করা, কিয়ামত দিবসের বিভীষিকাময় অবস্থান থেকে পরিত্রাণ লাভের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো- আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান, তার সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা, তার অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে এমন সবকিছু বর্জন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সব কাজ সম্পাদন, তার বিপরীতে চলা থেকে সতর্ক থাকা।  

বিপদ-সঙ্কট থেকে বাঁচার আরেকটি উপায় হলো- আল্লাহর বান্দাদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা। এ ক্ষেত্রে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।  

দেখুন, নবুওয়তের সূচনায় অহি নাজিলের প্রেক্ষিতে হেরা গুহা থেকে ভীত হয়ে ঘরে ফিরে আসার পর হজরত খাদিজা (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সাহস দিতে গিয়ে বলেন, ‘কখনও নয়, আল্লাহর কসম, আল্লাহ কখনও আপনাকে অসম্মানিত করবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, বিপদগ্রস্তদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদারি করেন, নিঃস্বদের সহায়তা করেন, সত্যিকার বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

মানুষের প্রতি ইহসান তথা অনুগ্রহের অন্যতম দিক হলো- দীনি ভাইদের অধিকার রক্ষা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। ’ তিনি আরও বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা পরস্পর বন্ধু। ’

আর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও স্নেহ-মমতায় মুমিনরা এক দেহস্বরূপ। দেহের একটি অঙ্গ যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন তার বেদনায় পুরো দেহ জ্বরাক্রান্ত হয়ে রাত জাগে। ’ -সহিহ মুসলিম

ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর জুলুম-অবিচার করে না। তাকে বিপদে একা ছেড়ে দেয় না। যে তার ভাইয়ের বিপদে তার পাশে থাকে, আল্লাহ তার বিপদে তার পাশে থাকেন। যে দুনিয়াতে তার কোনো ভাইয়ের বিপদ দূর করে, আল্লাহ তার কিয়ামত দিবসের সংকট দূর করবেন। যে কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন। যে দুনিয়াতে কারও কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার কষ্ট লাঘব করবেন- বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার সাহায্য করতে থাকবেন। ’

বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ বান্দাদের ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ দেবেন। দুনিয়ায় কেউ সংকট থেকে রক্ষা করলে, পরকালে আল্লাহ তাকে সংকট থেকে রক্ষা করবেন।

বস্তুত দুনিয়ার সংকট আর পরকালের সংকট এক নয়, বরং আখেরাতের সংকট অনেক বেশি ভয়াবহ। পরকালের এই ভয়াবহ সংকটে আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ বেশি বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ তার ওইসব বান্দার প্রতি রহম ও অনুগ্রহ করবেন, যাদের মধ্যে দয়া ও অনুগ্রহ আছে।  

‘যে কোনো মুসলিমের সংকট দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার সংকট দূর করবেন। ’ ইসলামি স্কলাররা এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটি হলো মুসলিমের বিপদ দূর করা এবং প্রয়োজন পূরণ করার ফজিলত ও মর্যাদা।

একজন মুসলিম সম্ভাব্য সব উপায়ে আরেক মুসলিমের কল্যাণে কাজ করবে- তার জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে। তার পদ-পদবি ব্যবহার করে, উপদেশ দিয়ে, ভালো কাজে উৎসাহ দিয়ে, সুসংবাদ দিয়ে, সুপারিশ করে, মধ্যস্থতা করে, সর্বোপরি তার অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করে।  

মনে রাখতে হবে, গোটা সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। আর সবারই এটা জানা যে, কোনো নেতা বা শাসক তার পরিবার-পরিজন কিংবা আপনজনের প্রতি কেউ ভালো আচরণ করলে তাতে খুশি হন। সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ করলে আল্লাহ অবশ্যই খুশি হবেন।  

এ অনুগ্রহ হলো- কাউকে বিপদে সাহায্য করা, সংকট দূর করতে সহায়তা করা, ভয়ভীতি দূর করা, দুর্বলদের সাহায্য করা। বিশেষ করে মুসলিমদের অধিকার রক্ষা করা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।