বছর ঘুরে আবারও এসেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ।
পবিত্র রমজান মাসজুড়েই মুসলমানদের প্রত্যাহিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল সাহরি, ইফতার ও তারাবি। নাজাতের আশায় তাই আজ সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজের পর আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে সবাই চোখের পানি ছেড়ে দেন। জীবনের সব পাপ ও অকল্যাণ থেকে মুক্তি ও জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ চেয়ে প্রতিটি ঈদ জামাতেই তাই সমস্বরে উচ্চারিত হয় আমিন আমিন ধ্বনি।
এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ পদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্য, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ বিদেশে অবস্থানরত সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এর আগে, খুব সকাল থেকেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ইসলামি বয়ান চলছিল।
সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টায়, ৯টা, ১০টা ও বেলা পৌনে ১১টায় এখানে আরও চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ মাঠ ময়দান, বাগেরহাটের বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশালসহ দেশজুড়ে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ঈদের নামাজ আদায় করেন বঙ্গভবনে। সেখানে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন।
এদিকে সুলতানি-মুঘল আমলের ঐতিহ্যকে ধারণ করে ঢাকার রাজপথে হয়েছে ঈদের আনন্দ মিছিল। ঈদকে আরও উৎসবমুখর করতে এই মিছিলের আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যেখানে ঢাকার ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই মিছিল পেয়েছে আরও বর্ণিল রূপ।
মিছিলে ছিল সুসজ্জিত পাঁচটি শাহী ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্যযন্ত্র। ছিল সুলতানি-মুঘল আমলের ইতিহাসচিত্র সম্বলিত পাপেট শো, যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ানো হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই আয়োজন শেষ করা হয়।
এছাড়া আজ বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়সহ বর্ণিল নানা আয়োজন থাকছে রাজধানীসহ দেশজুড়ে।
রাজশাহীতে ঈদ উদযাপন
রাজশাহীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। রাজশাহীর বিশাল এই ঈদ জামাতে ইমামতি করেন মহানগরীর রাজারহাতা জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মাওলানা মো. কাওসার হোসাইন। তাকে সহযোগিতা করেন- মহানগরীর তেরোখাদিয়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মোহাম্মদ সোয়েব হোসেন।
ঈদের নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় দেশ ও জাতির স্বার্থে সবার মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দেওয়া হয়।
নামাজ শেষে ঈদ জামাতে আসা মুসল্লিরা কোলাকুলি করেন। তারা পরস্পর ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের লক্ষ্যে এবার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সকাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, এতিমখানা, শিশুকেন্দ্র, শিশুপরিবার, শিশুপল্লী, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সেফ হোম এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করছে। এর মধ্যে বাড়তি খাবার হিসেবে পোলাও, মাংস ও সেমাইয়ের স্বাদ নিতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এদিন সরকারি ভবন ও সড়কসমূহ বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে শোভা পাবে বর্ণিল আলোকসজ্জা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ঈদের জামাতকে ঘিরে এবার কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাউকে জায়নামাজ ছাড়া কোনো ব্যাগ, ভারি বস্তু বা অন্য কোনো দ্রব্যাদি বহন করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ঈদুল ফিতরের নামাজকে ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। সেই সঙ্গে ঈদগাহ ও মসজিদগুলোর আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রাজশাহী মহানগরে উৎসবমুখর পরিবেশেই ঈদ উদযাপন হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৫
এসএস/এইচএ/