ঢাকা, সোমবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ইসলাম

নাটোরে ক্রিকেটার তামিম ইকবালের অর্থায়নে স্বপ্নের মসজিদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫৭, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
নাটোরে ক্রিকেটার তামিম ইকবালের অর্থায়নে স্বপ্নের মসজিদ স্বপ্নের মসজিদ

জাতীয় দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল শুধু খেলার মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও মানুষের মন জয় করেছেন ভিন্ন উদ্যোগে। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত হাপানিয়া গ্রামে নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন দৃষ্টি নন্দন একটি মসজিদ।

আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এই মসজিদে নামাজ আদায় করছেন শত শত মুসল্লি। স্থানীয়রা মসজিদটির নাম দিয়েছেন স্বপ্নের মসজিদ।

জানা যায়, ২০১৫ সালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের এক নারীর দান করা দুই শতাংশ জমির ওপর একটি মসজিদ নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। টিন আর ছনের বেড়া দিয়ে গড়ে তোলেন একটি ওয়াক্তিয়া ছোট মসজিদ। তবে ঝড় বৃষ্টি হলে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতো মসজিদটি। পরে বিদেশি একটি সংস্থা মসজিদটি নির্মাণে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এতে গ্রামবাসীদের মাঝে হতাশা আরও বেড়ে যায়। ফলে ভাঙা মসজিদেই নামাজ আদায় করতেন মুসল্লিরা। এসময় একদিন হঠাৎ করে কমিটির কাছে প্রস্তাব আসে মসজিদ নির্মাণের।

তবে সেটা আর কেউ নয়, মসজিদ নির্মাণে এগিয়ে আসেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। অসুস্থ থাকার কারণে মাঠের বাইরে থাকলেও প্রায় চার বছর আগে একটি মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। আর সেই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন সতীর্থ ক্রিকেটার তাইজুল ইসলামের কাছে। তার বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল গ্রামে। তিনি তামিম ইকবালের ইচ্ছে পূরণের জন্য তার বাবাকে নিজ এলাকার একটি অবহেলিত মসজিদের খোঁজ করতে বলেন। পরে তাইজুল ইসলামের বাবা খুঁজে পান হাপানিয়া গ্রামের এ মসজিদটি।

এদিকে একবার প্রতারণার শিকার হওয়ায় গ্রামবাসী আদৌ মসজিদটি নির্মাণ বা সংস্কার হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। তবে দেড় মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকৌশলী পাঠিয়ে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তামিম ইকবাল। পরে নিজ অর্থায়নে হাপানিয়া গ্রামে ২০২২ সালে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করে দেন তিনি। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ শহরের মতো আধুনিক মসজিদের আদলে এই অজো পাড়া গায়ে এই মসজিদটি নির্মাণ করে দেন তিনি।

এদিকে তামিম ইকবালের উদ্যোগে নির্মাণ করা মসজিদের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে নেট দুনিয়ায় শুরু হয় আলোচনার ঝড়। এখন গ্রামবাসীর কাছে এটি একটি স্বপ্নের মসজিদ। প্রতি শুক্রবার জুমআর নামাজের পর এবং রমজান মাসে ইফতার পূর্ব তামিম ইকবালের জন্য করা হয় বিশেষ দোয়া। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে মসজিদ নির্মাণ করায় স্থানীয়রা তামিম ইকবালের প্রতি কৃতজ্ঞ।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর রহমান, হারুনার রশীদ, মো. হান্নান সরদার বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দিকে নিজেদের অর্থায়নে ছনের বেড়া আর টিনের ছাউনি দিয়ে মসজিদটি তৈরি করা হয়। প্রথমে ওয়াক্তিয়া মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এটি। নামাজের সময় হলে ওই মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। পরবর্তীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ জুমআর নামাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত আর গ্রীষ্মকালে কাল-বৈশাখী ঝড়ে নড়বড়ে হয়ে যায় মসজিদটি। এজন্য প্রতি বছরই তা মেরামত করতে হয় তাদের। বিদেশি একটি সংস্থা মসজিদটি নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ফলে ভাঙা মসজিদেই তাদের ইবাদত করতে হতো। এতে কষ্টের সীমা ছিল না মুসল্লিদের।

হাপানিয়া পশ্চিম পাড়া টিআই খান জামে মসজিদের সভাপতি মো. সুলতান মাহমুদ মিঠু বাংলানিউজকে জানান, হাপানিয়া গ্রামের মানুষ দরিদ্র। তাই টাকার অভাবে শুরুতে ছনের বেড়া আর টিনের ছাপড়া দিয়েই হাঁপানিয়া-নলডাঙ্গা সড়কের ধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন স্থানীয় ৩০টি পরিবার। পরে নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে মসজিদটি পাকা করণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিষয়টি জানতে পেরে তামিম ইকবাল মসজিদটি নির্মাণ করে দেন। বর্তমানে মসজিদটিতে অন্যান্য আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা থাকলেও নেই এসি এবং কার্পেট। ফলে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের।

এদিকে যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত শখ ও ইচ্ছে পূরণে নির্মাণ করে থাকেন বাগানবাড়ি, রিসোর্ট কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁ ও পার্ক। এছাড়া অনেকে গড়ে তোলেন বৃদ্ধাশ্রম, স্কুল, মাদরাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্থাপনা। কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল একটি টিনের মসজিদ ভেঙে গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত জামে মসজিদ। এতে তিনি অর্জন করেছেন মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।