সহীহ মুসলিম শরীফ ৩য় খণ্ড দশম অধ্যায় (ইস্তিসকার বা বৃষ্টির নামাজ)
১৯৪৭-১৯৫৬ হাদীস:
১৯৪৭: আবদুল্লাহ ইবনে আবু বাকর (রা.) থেকে বর্ণিত| তিনি আব্বাদ ইবনে তামীমকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ মাযেনীকে বলতে শুনেছি- রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজের নির্ধারিত স্থানে চলে গেলেন এবং সেখানে পৌঁছে ইসতেসকার নামাজ পড়লেন| যখন কেবলামুখী হলেন, তিনি তাঁর চাদরটা উল্টিয়ে নিলেন|
টীকা: ইস্তিসকার (বৃষ্টির দুআ) সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত| তবে সেজন্য নামাজ পড়া সুন্নাত কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে| ইমাম আবু হানীফার মতে, এ নামাজ সুন্নাত নয়, বরং দুআই যথেষ্ট| বিপুল সংখ্যক সাহাবী-তাবেঈ’ এবং অধিকাংশ উলামার মতে, এ নামাজও সুন্নাত| আবু হানীফা (র.) নিজ মতের সপক্ষে ওইসব হাদীস পেশ করেন, যেগুলোতে এ নামাজের কোনো উল্লেখ নেই| যেমন উপরোক্ত হাদীস| আর বিশেষজ্ঞ আলেমরা ওই সব হাদীসের ভিত্তিতে সুন্নাত প্রমাণ করেন যাতে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইস্তিসকার জন্য দুরাকাত নামাজ পড়েছেন|
১৯৪৮: আব্বাদ ইবনে তামীম (রা.) থেকে তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত| তিনি বলেন, নবী (সা.) নামাজের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে ইসতেসকার দুআ করলেন এবং কেবলামুখী হয়ে তাঁর চাদরটা উল্টিয়ে দিলেন| অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন|
১৯৪৯: আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী (রা.) জানিয়েছেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসতিসকার উদ্দেশে মাঠের দিকে বের হয়ে গেলেন| যখন তিনি দুআ করার ইচ্ছা করলেন, কেবলামুখী হলেন এবং নিজের চাদর উল্টিয়ে দিলেন|
১৯৫০: আব্বাদ ইবনে তামীম মাযেনী থেকে তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত| তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন| তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন ইস্তেসকার উদ্দেশে বের হলেন| তিনি লোকদের দিকে পিঠ রেখে আল্লাহর কাছে দুআ করতে লাগলেন এবং কেবলার দিকে মুখ করে তাঁর চাদরটা উল্টিয়ে দিলেন| অতঃপর তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন|
১৯৫১: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত| তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) দুআ করার সময় উভয় হাত উপরে উঠাতে দেখেছি| এতে তাঁর বগলের শুভ্রতা পরিদৃষ্ট হচ্ছিল|
১৯৫২: আনাস ইবনে মালিক (র.) থেকে বর্ণিত| নবী (সা.) ইস্তিসকার দুআ করেছেন এবং দুআর সময় তিনি উভয় হাতের পিঠ দ্বারা আকাশের দিকে ইশারা করেছেন|
১৯৫৩: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত| নবী (সা.) তাঁর কোনো দুআয় হাত উঠাতেন না| কেবল ইস্তিসকায় হাত উঠাতেন| এমনকি এতে তাঁর বগলের শুভ্রতা পরিদৃষ্ট হতো| তবে আবদুল আ’লা তাঁর বর্ণনায় বলেছেন|
১৯৫৪: কাতাদা থেকে বর্ণিত| আনাস ইবনে মালিক (রা.) তাঁদের নবী (সা.) থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করে শুনিয়েছেন|
১৯৫৫: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত| এক ব্যক্তি জুমার দিন মসজিদে নব্বীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল| এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন| সে রাসূলুল্লাহর (সা.) দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! (অনাবৃষ্টির ফলে) মালসম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে|
জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে| অতএব আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাদের মেঘদান করেন| রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঠিয়ে দুআ করলেন,''হে আল্লাহ! আমাদের মেঘ দিন|’’ (আমাদের ফরিয়াদ শুনুন! আমাদের ফরিয়াদ শুনুন!) আনাস (রা.) বলেন, খোদার কসম! এসময় আসমানে কোনো মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিলনা| আর আমাদের ও সালা’ পাহাড়ের মাঝে কোনো ঘর-বাড়ি কিছুই ছিলনা| (ক্ষণিকের মধ্যে) তাঁর পেছন থেকে ঢালের ন্যায় একখ- মেঘ উদিত হলো| একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হলো| রাবীদ্বয় বলেন, এরপর খোদার কসম, আমরা সপ্তাহকার যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি| অতঃপর পরবর্তী জুমায় আবার এক ব্যক্তি ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করল| রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন| সে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে| অতএব আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন বষ্টিপাত বন্ধ করে দেন| রাবী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন, ''হে আল্লাহ! আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিওনা| হে আল্লাহ! পাহাড়ি এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানোস্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও|’’ এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল| আমরা বের হয়ে সূর্য কিরণে হাঁটাচলা করতে লাগলাম| শরীক বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিককে (রা.) জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি| আনাস (রা.) বললেন, আমার জানা নেই|
১৯৫৬: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত| তিনি বলেন, একবার
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যামানায় মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলো| ওই সময় একদিন জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের সামনে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন| এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! ধনসম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তান সন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে| অবশিষ্ট হাদীস পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে| এ বর্ণনায় আরও আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ''আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা-আলাইনা’’ রাবী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত দিয়ে যেদিকেই ইশারা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিক ফর্সা হয়ে গেছে| এমনকি আমি মদীনাকে আয়নার ন্যায় পরিষ্কার দেখতে পেলাম| |এদিকে, ''কানাত’’ নামক প্রান্তরে একমাস যাবত পানির ধারা বয়ে গেল| যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এসেছে সে-ই অতি বৃষ্টির সংবাদ দিয়েছে|
মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৪
ইসলাম
বৃষ্টির নামাজ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস
. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।