মিরাজ রজনী বা শবে মিরাজ। পৃথিবীর ইতিহাস তো বটেই, গোটা সৃষ্টিজগতের ইতিহাসে এ এক বিস্ময়কর ঘটনা।
এ নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বই-পুস্তক, হয়েছে অনেক গবেষণা। তবুও কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের কৌতুহল থেকে যায়। এমন রহস্যময় ভ্রমণের অনেক কিছুই হয়তো আমাদের জানা নেই। বাংলানিউজের পাঠকবন্ধুদের জন্য সেরকমই তিনটি বিষয়ে এ সংক্ষিপ্ত লেখাটি তুলে ধরা হলো।
মিরাজ রজনীতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পাঁচটি বাহন ব্যবহার করেছেন-
আল্লামা মাহমুদ আলূসী তাফসীরে রূহুল মাআনীর গ্রন্থকার বলেন, নভোমণ্ডল ও ঊর্ধ্বজগত পরিভ্রমণে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রাতে বাহন হিসেবে পাঁচটি জিনিস ব্যবহার করেছিলেন। (১) বোরাক- বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত (২) সিঁড়ি- প্রথম আসমান পর্যন্ত (৩) ফিরিশতাদের ডানা- সপ্তম আসমান পর্যন্ত (৪) জিবরাঈল আমীনের ডানা- সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত। (৫) রফরফ- মাকামে ‘قاب قوسين ’ (অর্থাৎ 'কোণার কাছাকাছি') পর্যন্ত।
মিরাজ রজনীতে আল্লাহ পাকের সঙ্গে নবীজির কথোপকথনের বিবরণ-
মহান আল্লাহ পাক তার প্রিয়তম বন্ধু ও হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এ একান্ত সাক্ষাতের বিশেষ মুহূর্তে কী কী কথা বলেছেন ও কী রহস্য আদান-প্রদান করেছেন- তা তো তিনিই একমাত্র ভালো জানেন। তবে কোনো কোনো হাদীসে যেসব বর্ণনা এসেছে- তা থেকে একটি বর্ণনা এখানে তুলে ধরছি।
হজরত আবু হুরাইরা রাজিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে জানা যায়, আল্লাহপাক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একান্ত আলোচনায় যা বলেছেন, আল্লাহপাক বললেন, আমি আপনাকে আমার হাবীব ও খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছি। সমগ্র মানবজাতির জন্য আপনাকে সুসংবাদবাহক ও ভীতিপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছি। আপনার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দিয়েছি ও আপনার বোঝা হালকা করেছি। আপনার আলোচনাকে আমি সমুন্নত করেছি। আমার তাওহীদের সঙ্গে আপনারও রিসালাত ও আবদিয়্যাত এর আলোচনা করা হয়। আপনার উম্মতকে আমি সর্বোত্তম উম্মত, মধ্যমপন্থী উম্মত, ন্যায়পন্থী উম্মত বানিয়েছি। সম্মান ও মর্যাদার বিচারে আপনার উম্মতকে অগ্রগামী এবং প্রকাশ ও অস্তিত্বের বিচারে উত্তরসূরী বানিয়েছি। আপনার উম্মতের কিছু লোককে আমি এমনভাবে সৃষ্টি করেছি যাদের হৃদয়টাই ইঞ্জিল হয়ে থাকবে (অর্থাৎ তাদের অন্তর ও হৃদয়জগতজুড়ে আল্লাহপাকের কালাম লেখা থাকবে)। আপনার অস্তিত্ব ও উপস্থিতিকে আমি নূর ও রূহ হিসেবে সর্বপ্রথম নবী আর প্রেরণা হিসেবে সর্বশেষ নবী বানিয়েছি। আপনাকে সূরা ফাতেহা ও সূরা বাকারার শেষাংশ দান করেছি- যা আপনার আগের কোনো নবীকে দেইনি। আমি আপনাকে হাউজে কাউসার দান করেছি ও আপনার উম্মতকে বিশেষ আটটি বিষয় দান করেছি- উপাধি হিসেবে ইসলাম ও মুসলমান, হিজরত, জিহাদ, নামাজ, সদকা, রমজানের সিয়াম, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ। আপনাকে বিজয়ী ও খাতামুল আম্বিয়া বানিয়েছি (অর্থাৎ সর্বপ্রথম ও শেষ নবী হিসেবে আপনাকে সম্মানিত করেছি)।
এক নজরে মিরাজ রজনীতে প্রাপ্ত উপহারসমূহ:
মিরাজের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেসব উপহার ও উপঢৌকন এবং নেয়ামতসমূহ দেওয়া হয়েছে, এর সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরা হলো-
১. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বুক বিদীর্ণ করা এবং তাতে ঈমান ও হেকমত ঢেলে দেওয়া।
২. হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গে বোরাক আরোহন ও মসজিদে আকসা ভ্রমণ।
৩. পৃথিবীরাজ্য পরিভ্রমণ
৪. আকাশের দিকে ঊর্ধ্বভ্রমণ ও আসমানরাজ্য পরিদর্শন
৫. আল্লাহ পাকের বড় বড় নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করা
৬. নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ।
৭. ফেরেশতাদের ইমাম হওয়া।
৮. বাইতুল মামুরে প্রবেশ করা।
৯. صريف الاقلام ‘কলমের লেখনী আওয়াজ’ শোনা।
১০. মহান আল্লাহ পাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ।
১১. আল্লাহপাকের সঙ্গে কথোপকথন।
১২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়া।
১৩. সূরা বাকারার শেষাংশ উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া।
১৪. উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বিশেষ মাগফিরাতের ওয়াদা প্রাপ্তি।
১৫. জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন।
১৬. আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ।
১৭. আল্লাহপাকের দিদার লাভ।
১৮. মসজিদে আকসায় ফিরিশতা ও নবীদের ইমামতি।
১৯. মক্কায় প্রত্যাবর্তন ও কাফেরদের সামনে দলীল পেশ করতে সক্ষম হওয়া।
২০. মক্কায় বসে পুনরায় মসজিদে আকসা দেখার সুযোগ।
তথ্যসূত্র: মাআরিফুল মিরাজ, আনওয়ারুল বারী
[email protected]
ইসলাম ডেস্ক মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪