ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

‌ইসলামে কোরবানির গুরুত্ব ও বিধান

আব্দুল্লাহ আল মাসুম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৪
‌ইসলামে কোরবানির গুরুত্ব ও বিধান

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আদম আলাইহিস সালাম থেকে সব যুগে কোরবানি ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না।

শরীয়তে মুহাম্মাদীর কোরবানি মিল্লাতে ইবরাহীমীর সুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কোরবানি। এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকী বিধানাবলীর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এর মাধ্যমে শাআইরে ইসলামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কোরবানিতে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন। (সূরা কাউসার: আয়াত-২)

আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেছেন- (হে রাসুল!) আপনি বলুন- আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ (অর্থাৎ আমার সবকিছু) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত। (সূরা-আনআম: আ-১৬২)
এছাড়া কোরবানীর মাধ্যমে গরিব-দুঃখি ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। দরিদ্র, অসহায়, এতিম ও অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হয়।
 
পশু জবাই করে কোরবানি করার মধ্যে আল্লাহ তা’আলার মহব্বতে নিজের সব অবৈধ চাহিদা ও পশুত্বকে কোরবানি করা এবং ত্যাগ করার হিকমত ও শিক্ষা রয়েছে। সুতরাং কোরবানি থেকে কুপ্রবৃত্তি দমনের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাই কোরবানির মধ্যে ইবাদাতের মূল বিষয় তো আছেই, সেই সঙ্গে তাকওয়ার অনুশীলনও রয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন-(মনে রেখো, কোরবানির পশুর) গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনোই পৌঁছায় না; বরং তাঁর কাছে কেবলমাত্র তোমাদের পরহেজগারিই পৌঁছায়।   (সূরা-হজ্জ: আয়াত-৩৭)

কোরবানির হিকমত ও তাৎপর্য
 কোরবানির মধ্যে অনেক হিকমত বিদ্যমান। এখানে কিছু বর্ণনা করা হলো:
# কোরবানি শিরক থেকে মুক্ত থাকার একটি কার্যকরী মাধ্যম। ইসলাম মুসলিমদের কোরবানির বিধান দিয়ে তাওহীদ তথা একত্ববাদের বিশ্বাসকে উজ্জ্বল ও দৃঢ় করণের পাশাপাশি এই শিক্ষাও দেওয়া হয়েছে যে এসব সৃষ্টি করা হয়েছে কোরবানি করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য। এর দ্বারা একদিকে যেমন তাওহীদের বিশ্বাস শাণিত হয়। তেমনি মানুষকে ইসলামের মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। কোরবানির মাধ্যমে নিজেদের বিবেককে জাগিয়ে তোলা প্রয়োজন।

# কোরবানি করার মাধ্যমে সবাই আল্লাহ তা’আলার ক্ষমতা ও আধিপত্য দৃঢ়চিত্তে মেনে নেওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার তাওহীদের স্বীকৃতি ঘোষিত হয়।

# মুসলিমরা বিশ্বাস করে থাকেন- আল্লাহ তা’আলাই হলেন এ বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।   এসব পশু তাঁরই। পশু কোরবানি সেই বিশ্বাসের স্বীকৃতিস্বরূপ।

# আল্লাহ তা’আলা যেসব পশুকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং সেসব দ্বারা আমাদের নানাভাবে উপকার লাভের সুযোগ দান করেছেন- তার শুকরিয়া আদায় করা হয় কোরবানির মধ্যমে।

# কোরবানির মাধ্যমে আশরাফুল আম্বিয়া সায়্যিদুনা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম, মূসা আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালাম প্রমুখ নবীদের পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের স্মৃতি রক্ষা করা হয়। তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে কোরবানি করার চেষ্টা করেন। তখন আল্লাহ তা’আলা একটি দুম্বাকে তার পরিবর্তে কোরবানি করান। এর মাধ্যমেই কোরবানি প্রবর্তন হয়।

# কোরবানি করার দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ ও পার্থিব জীবনের ভালোবাসা ইত্যাদি থেকে পরিশুদ্ধি অর্জন করা হয়। কোরবানির পশু জবেহ করার মাধ্যমে বাহ্যত কোরবানি দাতার মালের ক্ষতি হয়। আর এ লোকসান বা ক্ষতি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্যই হয়ে থাকে। তাই জাকাতের মতো এর দ্বারাও সম্পদের ভালোবাসার মধ্যে কিছুটা ঘাটতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে কোরবানি দাতার মনে এই অনুভূতি জাগ্রত হয় যে একটি পশু কোরবানি যখন আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাঁর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য অর্জনের কারণ হয়- তাহলে স্বয়ং নিজের জান-মাল সবকিছু আল্লাহর রাহে কোরবানি করে দেওয়া আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের কতো বড়ো মাধ্যম হতে পারে। এই অনুভূতি তার নিজের প্রতি ভালোবাসা কমিয়ে দিয়ে নিজেকে আল্লাহ তা’আলার রাহে কোরবানি করার চেতনাকে উজ্জীবিত করে।

ইসলাম ডেস্ক মেইল-[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।