ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মুহাররম ও মুসলমানদের করণীয়

মাওলানা ইউসুফ নূর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৪
মুহাররম ও মুসলমানদের করণীয়

বছরের চাকা ঘুরে আবার হাজির মুহাররম। হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররম।

এ মাসের দশম দিনকে আশুরার দিন বলা হয়। আবহমান কাল থেকেই মুহাররম মাস এক বিশেষ মর্যাদা ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং, এরমধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করো না। (সুরা তওবা: ৩৬)

বিদায় হজের সময় মিনায় প্রদত্ত খুতবায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মানিত মাসগুলোর বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক-জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম, অপরটি হলো রজব। মুসলিম
মনীষী ইমাম জাসসাস (রহ.) আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের ওপর অবিচার করো না। কুরআনের এ বাক্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এ মাসগুলোর এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে এতে ইবাদত করা হলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের তওফিক ও সাহস লাভ করা যায়। অনুরূপ, কেউ এ মাসগুলোতে পাপাচার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও পাপাচার থেকে দূরে থাকা সহজ হয়। তাই, এ সুযোগের সদ্ব্যবহার থেকে বিরত থাকা হবে অপূরণীয় ক্ষতি। কুরআনুল কারিম
মুহাররমের প্রথম দশকে যাবতীয় ইবাদত যথা-নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত, ইত্যাদির সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষত, এ মাসে রোজা রাখার অশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজানের রোজার পর শ্রেষ্ঠ রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। মুসলিম

মুহাররমের দশম দিবস (আশুরা) অতি পূণ্যময় ও মহিমান্বিত দিন। এ দিন রোজা রাখার ফজিলত ও তাকিদ অন্যদিনের চেয়ে বেশি। এটা মহানবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

কেনো এই রোজা

ইবনু আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনা হিজরত করেন, তখন ইয়াহুদিদের মুহাররমের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এদিনে রোজা রাখো কেনো? তারা বললো, এটা আমাদের মুক্তি দিবস। মহান আল্লাহ এদিন মুসা আ. তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন ও ফেরাউনকে তার দলবলসহ সাগরে নিমজ্জিত করেছেন। এর শুকরিয়া স্বরূপ হজরত মুসা আ. এদিন রোজা রেখেছেন। একই কারণে আমরাও রাখি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিকতর আপন ও হকদার। অতঃপর তিনি নিজেও এদিন রোজা রাখেন ও সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। বুখারি ও মুসলিম

আশুরার রোজার ফজিলত

উম্মতজননী হজরত হাফসা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা কখনও ছাড়তেন না। নাসায়ি

আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে আশুরার রোজা দ্বারা তিনি পূর্ববর্তী একবছরের গুণাহ মাফ করে দেবেন। তিরমিজি

উম্মাহর স্বাতন্ত্র্য রক্ষা

ইবনু আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিনে রোজা রাখলেন ও সবাইকে রোজা রাখার আদেশ দিলেন। সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এদিনে ইয়াহুদিরাও রোজা রাখে আর আমরাও রাখি, এতে তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে নয় তারিখের রোজাও রাখবো। মুসলিম

ইবনু আব্বাস বলেন, মুহাররমের নবম ও দশম এই দুইদিনে তোমরা রোজা রাখো এবং এই ক্ষেত্রে ইয়াহুদিদের বিপরীত করো। তিরমিজি

অনেকের ধারণা, কারবালা ট্রাজেডির কারণেই শরিয়তে আশুরার এতো গুরুত্ব। এমন ধারণা ঠিক নয়। কারণ, কারবালার ঘটনার বহুকাল পূর্বে উপরে বর্ণিত ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা আশুরার দিনে ঘটেছে। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে কারবালার ঘটনা একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইনসহ রা. আহলে বাইতের ৭৮ জন সদস্য শাহাদৎ বরণ করেছেন। তারা কলিজার তপ্ত খুন দ্বারা অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অমর ইতিহাস রচনা করেছেন এবং প্রজ্বলিত করেছেন ইসলামি চেতনার অনির্বাণ মশাল। সমাজের সর্বক্ষেত্রে নববি আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করাই ছিলো শোহাদায়ে কারবালার উদ্দেশ্য।

ইমান-আকিদা ও আমল ফলপ্রসু হওয়ার জন্য সুন্নতের অনুসরণ ও বিদআত বর্জন অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর তবে এটাই হচ্ছে মুহাররমের শাশ্বত আহ্বান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।