ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ভারতের প্রথম মুসলিম নারী পাইলট

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫
ভারতের প্রথম মুসলিম নারী পাইলট

যে কোনো কিছু জয়ের গল্প সবসময় একটু ভিন্ন হয়, হয় আনন্দের। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে যে বিজয় অর্জিত হয় তা অবশ্যই গৌরবের।

। সারাহ হামিদ আহমেদের গল্পটি তেমনই একটি বিজয়ের গল্প, আশার আলো দেখানো গল্প। বলছি ভারতের প্রথম মুসলমান নারী পাইলট সারাহ হামিদ আহমদের কথা।

আমরা এটা জানি, আকাশে ওড়ার শখ ভারতীয় নারীরা মিটিয়েছেন বেশ আগেই। তাই বলে বিমান চালনা! না, এটা তো পুরুষদের পেশা, এ কাজে অন্যদের জায়গা নেই। চিরায়ত এ ধারণা ভেঙে দিলেন সারাহ। সারাহ এখানেই বিশিষ্ট ও ইতিহাসের অংশ। কারণ, সারাহ একে তো নারী, তার ওপর আবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক। কাজেই ভারতীয় মুসলিম সমাজের রক্ষণশীলতাকে অতিক্রম করে তাকে জয় করতে হয়েছে এ জায়গা।

ব্যাঙ্গালুরুর ২৫ বছর বয়সী এই নারী ভারতের উড্ডয়ন খাতের ৬০০ নারীর মধ্যে এ মুহূর্তে একমাত্র মুসলমান নারী, যিনি পেশাদার পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সারাহ’র পথচলা যে খুব মসৃণ ছিলো তা বলা যাবে না। সমাজের ভ্রু কুঁচকানোকে পাত্তা না দিয়ে সারাহ অদম্য এক শক্তিবলে হেঁটেছেন তার স্বপ্নের পথে। অবশ্য শুরুর বাধাটি এসেছিল তার পরিবারের ভেতর থেকেই। ভাবা যায়!

সারাহ’র বাবা হামিদ হুসাইন আহমেদ এর কথায়, ‘আমরা শুরুতে তাকে নিরুৎসাহিতই করেছি। আমাদের মুসলিম পরিবারের মেয়েরা আসলে এমন কোনো পেশায় যায় না যেখানে তাকে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হয়, অথবা কোনো সঙ্গী ছাড়া হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়ে। ’

‍কিন্তু বাবা হামিদ হুসাইন মেয়ের অনড় অবস্থান দেখে এরপর কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে তার এক পাইলট বন্ধুর সঙ্গে। ‘আমার বন্ধু ফরিদ আমাকে বলে, আমার বরং গর্ব করা উচিৎ যে, কোনো মুসলমান মেয়েই যে পেশাটির কথা স্বপ্নেও ভাবে না, সারাহ সেটার ব্যাপারে উৎসাহী। মূলত আমি ফরিদের কথাতেই আমি শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেই বলা যায়। ’

২০০৭ সালে সারাহ’র বয়স তখন ১৮। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফ্লাইং স্কুল থেকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন তিনি। আর এটাই সারাহ’র জীবনের টার্নিং পয়েন্ট কিংবা সবশেষ সবুজ সংকেত বলে মানেন সারাহ’র বাবা হামিদ হুসাইন। এরপরের গল্প তো সবার জানা। সে গল্প আকাশ জয়ের গল্প। গর্বের গল্প।  

পাইলট হলেও সারাহ আর অন্য দশজন মেয়ের মতোই স্বপ্ন দেখেন বিয়ে করে সংসারী হবেন। ভারতীয় নারী বলে কথা।

জীবনের শুরু থেকে একের পর এক বাঁধা ডিঙিয়ে বড় হওয়া সারাহকে নাইন ইলেভেন পরবর্তী সময়ে পশ্চিমের ইসলামাতঙ্কের নির্মম শিকারও হতে হয়েছে। সে পরিস্থিতি সারাহ হালকা ‘রসিকতা আর মজার সঙ্গে’ সামাল দিয়েছেন।

সারাহ’র পথ ধরে ভারতে আরো দু’জন মুসলমান নারী এখন পাইলট হওয়ার অপেক্ষায়। তারা হলেন, ২৬ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন সৈয়দা ফাতিমা সালভা ও ১৮ বছর বয়সী আয়েশা আজিজ। এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে প্রচণ্ড আশাবাদী সারাহ। তাই তো সব মেয়েদের প্রতি সারাহ’র উদাত্ত আহ্বান, ‘কষ্ট হবে, তবুও স্বপ্নটাকে মরতে দিও না। সমাজ তোমাকে যাই ভাবুক না কেন। তুমি তোমার সিদ্ধান্তটা নিও যর্থাথভাবে। ’

বর্তমান কর্মজীবন তিনি বেশ উপভোগ করছেন, এ বিষয়ে সারাহ বলেন, ‘লোকজন প্রথম আমাকে দেখার পর খ্রিস্টান মনে করে, কিন্তু যখনই তারা আমার নাম শুনে তখন বেশ লজ্জা অনুভব করে। আমি মুসলিম তা শোনার পর লোকজনের চেহারায় যে পরিবর্তন আসে সে বিষয়টি দেখতে আমি খুব পছন্দ করি। ’

সারাহ গত দু’বছর যাবৎ বিমানচালকের পেশায় কর্মরত আছেন।

কবি বলেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী; অর্ধেক তার নর। ’ এ বিখ্যাত কবিতা আমাদের প্রেরণার অনন্ত উৎস। সেই প্রেরণার আলোকে যুগে যুগে সারাহ’র মতো নারীরা দৃষ্টান্ত হয়ে আমাদের সামনে আসে। কায়মনোবাক্যে কামনা করি, নারীর এই অগ্রযাত্রা আরও সুন্দর হোক, মসৃণ হোক তাদের পথচলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘন্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।